- ডিসেম্বর ৯, ২০২২
- জাতীয়
- 378
নিউজ ডেস্কঃ সব ধরনের অনিশ্চয়তা কাটার পর সমাবেশটি রাজধানীর গোলাপবাগে হচ্ছে, সেটি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে মাঠটিতে।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সায়েদাবাদ সংলগ্ন এই মাঠে অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি দলের পক্ষ থেকে জানানোর পর সোয়া চারটার আগেই নেতা-কর্মীদের প্রথম দলটে পৌঁছে যায় মাঠে। সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে ঢুকতে থাকে তারা। সন্ধ্যার পরে পরেই মাঠের তিন ভাগেরও বেশী পূর্ণ হয়ে যায়।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মাঠে বাড়তে থাকে ভিড়। সেখানে তারা ‘খালেদা জিয়ার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘তারেক রহমানের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দিয়ে মাঠ মাতাচ্ছে। একদল মানুষকে নামাজ পড়তেও দেখা যায়।
নেতা-কর্মীদের মিছিলের কারণে মাঠের সামনের সড়কে যানজটও দেখা দিয়েছে।
সমাবেশ স্থলে আসা চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. সায়েদ বলেন, ‘আমরা সরকারের ফাঁদে পা দেই নাই। তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলেছিল। আমরা রাজি হই নাই। দেখেন কী পরিমাণ লোক হয়েছে আজকেই।’
নেতা-কর্মীরা সেখানে পৌঁছে গেলেও মঞ্চ নির্মাণের কাজ সন্ধ্যায়ও শুরু হয়নি। আর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শনিবার বেলা ১১টায় সেখানে জনসভা শুরু হবে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ নানা দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে প্রতি শনিবার দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির সমাবেশের প্রতিটিতেই এই চিত্র দেখা গেছে। কোথাও জনসভার আগের দিন, কোথাও এমনকি দুই বা তিন দিন আগে থেকেই সভাস্থলে নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা গেছে।
ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে রাজধানীতে ১০ ডিসেম্বর জনসভার ডাক দেয়া হলেও এটি হবে কি না, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় জনসভার স্থল নিয়ে বিরোধের কারণে।
সমাবেশস্থলে আসা শরীয়তপুর কনেশ্বর ইউনিয়ন যুবদল কর্মী মো. আল-আমিন বলেন, ‘এই সরকার অবৈধ সরকার। তারা আমাদের ভয় পায়, এই কারণে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। আমরা চেয়েছিলাম নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে, দেয় নাই। তবে গোলাপবাগ মাঠে আমরা সন্তুষ্ট।’
শনিবার বেলা ১১টায় গোলাপবাগে সমাবেশ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে এর আগের ৯টি বিভাগীয় সমাবেশেও দেখা গেছে আগের দিন থেকেই নেতা-কর্মীরা মাঠে অবস্থান নেন
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলার অবসান চাই। আমাদের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে। কাল দেখতে পারবেন লোক কাকে বলে। আমাদের ঢাকা আসতে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমরা ভয় পাই নাই।’
বিএনপি এই সমাবেশটি করতে চেয়েছিল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নয়াপল্টনেই জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে বুধবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয় সেখানে। প্রাণ হারান একজন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এসে পুলিশের নিষেধ সত্ত্বেও নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। বলেন, তারা যাবেন, জনগণও যাবে। বাধা এলে জনতাই সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কী করবে।
তবে রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বরফ গলার উপক্রম হয়। সিদ্ধান্ত হয় বিএনপি কমলাপুর স্টেডিয়াম অথবা মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করবে।
তবে গভীর রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের তুলে নেয়ার ঘটনায় তৈরি হয় নতুন পরিস্থিতি।
এর মধ্যে হঠাৎ করেই গোলাপবাগ মাঠের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে দেখা করে জানান, গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি মিলেছে। সেখানেই হবে তাদের জমায়েত।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার বেলা ১১টায় শুরু হবে তাদের জমায়েত। এই সমাবেশ সফল করে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করবে বলেও আগাম ঘোষণা দিয়ে রাখেন তিনি।