• ডিসেম্বর ৯, ২০২২
  • রাজনীতি
  • 297
যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদেরও গোলাপবাগে ডাকল বিএনপি

নিউজ ডেস্কঃ কথার লড়াই, এরপর সংঘাত সহিংসতার পথ মাড়িয়ে রাজধানীতে বিভাগীয় সমাবেশের জায়গা চূড়ান্ত হওয়ার পর বিএনপি সেখান থেকে সরকারকে বিদায়ের ১০ দফা ঘোষণার কথা জানিয়েছে। জোট ভেঙে গিয়ে যাদেরকে নিয়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন করতে চাইছে তাদেরকেও সেই সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সেই দলগুলো যেন নিজেরাও আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে, সে অনুরোধও করা হয়েছে।

নয়াপল্টন নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এ নিয়ে বিরোধের মধ্যে বুধবারের সংঘর্ষের দুই দিন পর শুক্রবার বিএনপির প্রস্তাবেই গোলাপবাগ মাঠ তাদেরকে বরাদ্দ দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলটির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য।

বিএনপির হয়ে সেখানে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি গোলাপবাগে সমমনা দলগুলোকেও যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে সকল নেতাকর্মী, সকল পর্যায়ের জনগণ ও আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে যুগপৎ আন্দোলনে যে সব দল, ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।

‘আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ আমরা সকাল ১১ টা থেকে শুরু করব, আমরা আমাদের সকল নেতাকর্মী, সমর্থক, এবং অন্যান্য দল যারা ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে, তাদের সকলকে এই প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা আগামীকাল শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ সফল করার জন্য উপস্থিত হবেন।’

রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণকেও সমাবেশে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। মোশাররফ বলেন, ‘ঢাকার যারা জনসাধারণ আছে, আমাদের দলের নেতা কর্মী নয়, সেই সকল পর্যায়ের জনসাধারণকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই স্বৈরাচরি ও গায়ের জোরের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে অপচেষ্টা করেছে, তার প্রতিবাদ ও জবাব চাওয়ার জন্য এবং নিজেদের মনের কথা বলার জন্য সমাবেশে উপস্থিত হোন।’

এই সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের নিন্দাও জানানো হয়। অভিযোগ করা হয়, বিএনপি যেন তার সমাবেশকে করতে না পারে, সে জন্যই জনসভাস্থল নিয়ে এত কিছু করা হয়েছে। তবে বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও বিএনপির এই সমাবেশ সফল হবে।

গোলাপবাগ তাদের নিজেদের চাওয়াই ছিল উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘এত গড়িমসি করে এই গোলাপবাগ মাঠ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। এর একটিই উদ্দেশ্য আমরা মনে করি যে, এই ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে যেন সকল জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে না পারি, সেজন্য শুধুমাত্র আমাদের এই ভেন্যু নিয়ে এত লুকোচুরি….।’

১০ ডিসেম্বর সমাবেশে কী হবে- এটা নিয়ে অপপ্রচার করা হয়েছে অভিযোগ করে মোশারফ বলেন, ‘আমাদের দলের মহাসচিব বলেছেন, বারবার বলেছেন যে, জনগণ বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যে রায় দিয়েছে, যে মতামত ব্যক্ত করেছে…যেই আমাদের এখনকার যে দাবিগুলো, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ করা, লোডশেডিংকে কন্ট্রোলে আনা, ভবিষ্যতে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন, এসব দাবিগুলোতে কিন্তু আমরা আমাদের সমাবেশগুলো করেছি।

‘কালকেও এই দাবি নিয়েই সমাবেশ হবে। যে সমাবেশ থেকে আমরা আগামী দিনের এই সরকারের বিদায়ের জন্য কতগুলো চার্টার্ড ডিমান্ড বা দফা ঘোষণা করব।’ যাদেরকে সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তারাও যেন বিএনপির এই দফার পক্ষে মাঠে নামে, সেই আহ্বানও জানান মোশাররফ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি সেই, যুগপৎভাবেই আমাদের এই যে ১০ দফা প্রণয়ন করেছি, সেটাকে ঘোষণা করবেন এবং যার যার অবস্থান থেকে ভবিষ্যতে যুগপৎভাবে এই দফাগুলো আদায়ের জন্য আমাদের আন্দোলনকে শানিত করার জন্য যার যার অবস্থান থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন এবং এই দফাগুলোর সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করবেন।’

গোলাপবাগে যাওয়া বিএনপির পরাজয় কি না

সংবাদ সম্মেলন শেষে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর সরকারের কথাতে বিএনপি যে গোলাপবাগে সমাবেশ করছে, সেটি দলটির পরাজয় কি না।

প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘না’ ‘না’ বলতে থাকেন একসঙ্গে।

সেই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা নানা সময় বলে দিয়েছেন যে খোলা জায়গায়ই সমাবেশ করতে হবে, সড়কে নয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের কথাতেই সমাবেশ করছে। আর প্রধান অতিথি ও প্রধান উপদেষ্টাকে ছাড়া এই সমাবেশ..সবকিছু মিলিয়ে নেতাকর্মীরা কীভাবে দেখছেন। বিএনপি কীভাবে এটি সফল করবেন।

জবাবে মোশারফ বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার এই স্থানটি আমাদের দেয়নি। এটা আমাদেরই প্রস্তাব। আমরা কালকে রাতে তা জানিয়েছি এবং মির্জা আব্বাস সাহেব নিজেই এই প্রস্তাব দিয়ে গেছেন পুলিশ কমিশনারকে। আর সেই প্রস্তাব নিয়েই আজকে আমাদের দুজন প্রতিনিধি এই প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল। তাদের সামনেই পুলিশ কর্মকর্তা এই সম্মতি দিয়েছেন।

যুগপতের সঙ্গীদেরও গোলাপবাগে ডাকল বিএনপি

বিএনপি রাজধানীতে তাদের বিভাগীয় সমাবেশকে করতে চেয়েছিল নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে। তবে পুলিশ অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তবু নয়াপল্টনে জড়ো হওয়ার ঘোষণা আসে। এ নিয়ে বুধবার হয় সংঘর্ষ। পরে অনেকটা নাটকীয়তার সঙ্গে বিএনপির জনসভাস্থল চূড়ান্ত হয়।

‘আমরা চিঠিতে তাদের বলেছি যে, আমরা কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। যেহেতু আপনারা সেটিকে আমাদের সমাবেশের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না, সেক্ষেত্রে গোলাপবাগ মাঠে আমরা সমাবেশ করতে চাই। সেখানে মাঠ, মাইক ও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।

‘দ্বিতীয়ত এই যে আপনারা প্রশ্ন করেছেন যে মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা গ্রেপ্তারে পর তাদের অনুপস্থিতিতে সমাবেশ করছি…। আমি বলব, এই সমাবেশ এখন আর দলীয় কোনো সমাবেশ না, এটা হচ্ছে জনগণের সমাবেশ। তাই আমরা কেউ থাকলাম না থাকলাম আমরা মনে করি এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নয়, এই সমাবেশটিই গুরুত্বপূর্ণ।

‘আর সরকার এসব করছেই আমাদের সমাবেশ যেন না করি, তাই আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ এই সমাবেশ জনগণের সমাবেশ জনগণই করবে।’

এ সময় পাশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সমাবেশে উপস্থিতি যাতে কম হয় সেজন্য সরকার ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আর একটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করেছে তারা। সেটি হলো, আলোচনার কথা বলে তাদের (মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস) নিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে আগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আজকে এই সারিতে আমাদের যাদেরকে দেখছেন, কালকে সমাবেশের মঞ্চে গেলে আপনারাও হতাশ হতে পারেন। অনুরূপ কাণ্ড সরকার আমাদের সঙ্গে করতে পারে এই আশঙ্কাও আছে। তারপরও জনগণের জনসভা তারাই সফল করবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, আবদুল মইন খান, স্বাস্থ বিষয়ক সম্পাদক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামালও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।