- ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
- লিড নিউস
- 190
শাবি প্রতিনিধিঃ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজতবা আলী হলে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে র্যাগের সঙ্গে ওই পাঁচজন ছাড়া জড়িত ছিলেন আরও ১০ জন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তদন্ত কমিটি সূত্রে আজ শনিবার এ তথ্য জানা যায়।
শাস্তির আওতায় বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা তদন্তে র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। বিস্তারিত তদন্তের পর প্রতিবেদন দেবেন তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এতে যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাঁদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের বাইরে নতুন করে কাউকে শোকজ কিংবা কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে র্যাগ দিয়েছিলেন একই বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। র্যাগের শিকার নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী ভয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। পরে বাড়ি থেকে বিষয়টি মুঠোফোনের খুদে বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধানকে অবহিত করেন ওই শিক্ষার্থী। তিনি ওই রাতের ঘটনাকে তাঁর ‘জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ রাত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ২২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। প্রথম দিকে শুধু এক শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচিত হলেও পরে জানা যায়, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ১০ জনের মতো নবীন শিক্ষার্থীর রাতে পরিচয় পর্বের নামে ডেকে নিয়ে র্যাগ দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে ১৫-১৬ শিক্ষার্থী জড়িত।
র্যাগের ঘটনায় বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন মো. আপন মিয়া, মো. আল আমিন, মো. পাপন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন ও মো. আশিক হোসেন। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের (বিবিএ) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই সঙ্গে তাঁরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের দলীয় কোনো পদ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারাও স্বীকার করেছেন বহিষ্কৃতদের মধ্যে তিনজন তাঁদের কর্মী। ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের বাইরেও র্যাগের ঘটনায় যে কয়েকজন জড়িত থাকার নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে অন্য ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীও আছেন। এটিকে দলীয়ভাবে নাম দেওয়া ঠিক নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত শুরু করেছে। আগামী ৫ মার্চ তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান মাজহারুল হাসান মজুমদার বলেন, তদন্তকাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর বাইরে নতুন করে আর কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যাঁদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের হলের আসন বাতিল এবং ক্যাম্পাসে অবস্থানেও বিধিনিষেধ রয়েছে।
অভিযোগ দেওয়া শিক্ষার্থী যা বলছেন
র্যাগের শিকার ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী এতটাই ভয় পেয়েছেন, তিনি রাতেই বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। বাড়িতে যাওয়ার পর বিষয়টি তাঁর বিভাগীয় প্রধানকে মুঠোফোনের খুদে বার্তায় জানান। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ওই রাতে র্যাগের ঘটনায় তিনি খুবই ভয় পান। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আপত্তিকর বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে অভিনয় করতে বাধ্য করছিলেন। এগুলো না করলে হুমকি ও নির্যাতনের ভয় দেখানো হচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, নবীন শিক্ষার্থী যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউই এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তবে বিভাগীয় প্রধান আগে বলেছিলেন, র্যাগের ঘটনা ঘটলে যাতে তাঁকে অবহিত করা হয়। বিষয়টি মাথায় আসার পর বাড়িতে ফিরে গিয়ে তিনি মুঠোফোনের খুদে বার্তায় অবহিত করেন।
র্যাগের শিকার ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, মুঠোফোনে বিষয়টি জানানোর পর বিভাগীয় প্রধানসহ তদন্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা তাঁকে র্যাগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সামনে মুখোমুখি করান। এ সময় তিনি পাঁচজনকে শনাক্ত করতে পারেন। তবে র্যাগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তিনি যে অভিযোগগুলো এনেছেন, সেগুলো স্বীকার করেননি। তিনি আরও বলেন, র্যাগের ঘটনার পর তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। বিভাগীয় প্রধান শ্রেণিকক্ষে যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো তাঁর মনে পড়ে। এরপরই তিনি বিষয়টি অবহিত করেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ঘটনার বিস্তারিত লিখিত আকারে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। তিনি ওই দিনই ঘটনার বিস্তারিত লিখে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন।
বর্তমানে মানসিক অবস্থা কেমন এবং নিয়মিত ক্লাস করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষার্থী বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি ক্লাস করেছেন। র্যাগের ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও বর্তমানে অনেকে তাঁকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করছেন। এতে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছেন। এ ছাড়া তিনি এমনও চান না যাতে তাঁর জন্য কারও শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়। তবে র্যাগিংয়ের ঘটনা যাতে না ঘটে, আর কেউ যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, তেমনটি তিনি চান।