- ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
- লিড নিউস
- 211
নিউজ ডেস্কঃ সবকিছু শান্ত ছিল। ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। হঠাৎ করে নির্বাচনী আমেজ সিলেট নগরে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন। চলতি বছরেই এ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কখন নির্বাচন, এখনো নিশ্চিত নয়। জুন কিংবা জুলাইয়ে হতে পারে বলে ধারণা সবার। কারণ এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ।
বর্তমান সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এখনো নীরব।নির্বাচন করবেন কি-না স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, ভাবছেন। বিএনপি’র তরফ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। এবার দলের অভ্যন্তরে পিনপতন নীরবতা।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ধীরে ধীরে সরব হচ্ছিলেন। লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। জানুয়ারির শেষ দিকে নতুন করে তোড়জোড় শুরু হলো। মেয়র নির্বাচন করতে হঠাৎ সিলেটে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার ভাষ্য হচ্ছে; গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে মাঠে নেমেছেন। তার সমর্থকরা ধরেই নিচ্ছেন নগরে নৌকার কাণ্ডারি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ২২ শে জানুয়ারি সিলেটে আসার দিনই বিশাল শোডাউন। এতে যোগ দেননি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র পর্যায়ের নেতারা। তবে সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। সেই থেকে তোড়জোড় শুরু। নগরে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। সেটি কেবল এখন আর প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। চলছে রীতিমতো প্রচার প্রচারণা। এই প্রচারণায়ও প্রতিযোগিতা। পোস্টার-বিলবোর্ডকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এখন মূল লড়াই। প্রথমে নগরে পোস্টারিং করা হয় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে। সাঁটানো হয় বড় বড় বিলবোর্ডও। পরে এসে যোগ দেন আরেক সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল। দু’জনের ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে যায় সিলেট নগর। এতে তারা দু’জন নজর কাড়েন সবার।
এমন পরিস্থিতিতে বিব্রত অন্য প্রার্থীরা প্রথমেই চুপ ছিলেন। পরে তারাও এসে যুক্ত হয়েছেন এই প্রতিযোগিতায়। এখন প্রায় সবাই ব্যস্ত পোস্টার ও বিলবোর্ড সাঁটানো প্রতিযোগিতায়। এ নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা সিলেটে। ভেতরে ভেতরে আছে ক্ষোভও। বিতর্কেরও অন্ত নেই। আনোয়ারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজনেরা দাবি করেছেন- সিলেটে সয়লাব ছিল আনোয়ারুজ্জামানের ব্যানার ও বিলবোর্ডেও। এরপর যেখানেই আনোয়ারুজ্জামানের পোস্টার ছিল সেখানেই পোস্টারের উপর পোস্টার সাঁটানো হয়। কিছু কিছু স্থানে ব্যানার ও বিলবোর্ড নামিয়ে নতুন করে অন্যদের বিলবোর্ড ও ব্যানার সাঁটানো হয়। তবে এ নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে অভিযোগ করেননি আনোয়ারুজ্জামান কিংবা তার সমর্থকরা। তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিকে আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে প্রথমে ব্যানার-বিলবোর্ড প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন এটিএম হাসান জেবুল। পরে মাঠে নামেন যুগ্ম সম্পাদক ও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আজাদুর রহমান আজাদ। যেখানেই আনোয়ারের বিলবোর্ড ও ব্যানার রয়েছে সেখানেই আজাদের পক্ষের লোকজনের পক্ষ থেকে ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। নগরের চৌহাট্টা। প্রাণকেন্দ্র ওই এলাকা। গত ১৫ দিন ধরে ওখানে পাশাপাশি রয়েছে আনোয়ার ও আজাদের বিলবোর্ড। ওই এলাকায় সবচেয়ে বেশি পোস্টারিং করা হয়েছে।
পোস্টার প্রচারণায় শেষ মূহূর্তে এসে শরিক হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন থেকে তার কর্মী সমর্থকরা নগরে পোস্টারিং শুরু করেন। নগরের হুমায়ূন রশীদ চত্বর, চণ্ডিপুল, সুরমা মার্কেট, কোর্ট পয়েন্ট, রিকাবীবাজার, আম্বরখানাসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপকহারে পোস্টারিং, ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। আগাম প্রচারণার পোস্টারিং ও বিলবোর্ড সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য নেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের। তাদের দাবি হচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রচারণা করা হচ্ছে না। কর্মী-সমর্থকরা উদ্যোগী হয়ে এই প্রচারণা শুরু করেছেন।
এদিকে শুধু আওয়ামী লীগই নয়, জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে নগরে পোস্টারিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬-৭ জন প্রার্থীর পোস্টারিংয়ে নগর সয়লাব হয়ে গেছে। নগরের পুরাতন ২৭ ওয়ার্ডেই নয়, নতুন অধিভুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডেও একইভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নগরের মডেল সড়ক হচ্ছে বন্দর থেকে আম্বরখানা সড়ক। এই সড়কটিতে আইল্যান্ডে রোপণ করা হয়েছে ফুলের গাছ। নগরের দেয়াল পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায় সময় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগাম প্রচারণার প্রতিযোগিতায় কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এতে করে নগরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা এ বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও রয়েছে দো-টানায়। বিষয়টি তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন। কিন্তু এখনো কোনো উদ্যোগ নেননি।