- এপ্রিল ১, ২০২৩
- মৌলভীবাজার
- 218
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় আখাউড়া-সিলেটে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মৌলভীবাজার। এ জেলার বেশিভাগ রেলস্টেশনেই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রভাবশালীরা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের সঙ্গে জড়িত, নানান কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
রেলওয়ের বিদ্যুৎ লাইন থেকে যেসব অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়, সেগুলোর বিল রেলওয়ে বহন করে আসছে। পাশাপাশি সরাসরি মেইন লাইন থেকে হাজার হাজার দোকানপাট, বাসা বাড়িতে সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছে। এছাড়াও রয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ হারানোর শঙ্কা।
শুধু তাই নয়, কর্মচারীরা নিজেদের নামে বিদ্যুৎ মিটার সংযোগ নিয়ে একাধিক ভাড়াটেকে অবৈধভাবে লাইন সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত এবং স্থানীয়ভাবে এরা প্রভাবশালী বলে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
সম্প্রতি সরেজমিন কুলাউড়া, ভানুগাছ এবং শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কারও কারও ঘরে জ্বলছে বাতি আবার কারও ঘরে এলইডি টিভি, ফ্রিজ, রান্নার জন্য প্রকাশ্যে হিটার ব্যবহার। এ জন্য তাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে মাত্র ৫শ থেকে দুই হাজার টাকা। বিদ্যুৎ নির্ভর আরাম-আয়েশে কাটছে তাদের বিলাসী জীবন। নেই বিদ্যুতের কোনো মিটার, মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার কত ইউনিট তাও জানার উপায় নেই। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় মাসের পর মাস অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও নামমাত্র মূল্য দিয়ে থাকেন তারা।
আখাউড়া-সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে কয়েকটি বন্ধ থাকায় সেগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী বেশিরভাগই পরিবারকে ভাড়া দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। দিনের পর দিন এভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে সুবিধা ভোগ করছেন তারা। ফলে বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়ছে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে বিভাগ।
প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবাসিক কোয়ার্টার (বাসা), মার্কেট, কলোনি, ছোট, বড় হাজার হাজার স্থাপনা রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ পিডিবি (ওয়াপদা) ও পল্লি বিদ্যুৎ থেকে এসব বাসা ও অফিসের বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে কয়েকটি রেলস্টেশনে কয়েক হাজার দোকানপাট, মার্কেট, বাসা নির্মাণ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া বাসা ও প্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগেই নেই কোনো মিটার। অবৈধভাবে সংযোগ নেয়া এসব মার্কেট, বাসা, বাড়িতে লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ, ইলেকট্রিক আয়রন, বৈদ্যুতিক চুল্লি, পানি উত্তোলনের মটরসহ রান্নায় ব্যবহৃত হিটার, হোটেলে চলে রেলওয়ের বিদ্যুতে। শুধু তাই নয়, শত শত ভাসমান দোকান, টং দোকান, ঝুপরি ঘরে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী একাধিক ব্যক্তি কথাপ্রসঙ্গে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা এসব অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত। টাকা দিয়ে বাসায় বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছেন। মাসে ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়।
অবৈধ বিদ্যুৎ প্রদানকারী আব্দুল রহিম (সাধারণ সম্পাদক-রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী সংগঠন) এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে তথ্য কীভাবে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে বলেন, এসব তথ্য আমাদের কাছে সংরক্ষিত নেই, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাবেন। রেলওয়ের একাধিক স্টাফ কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ‘এগুলোর সঙ্গে আমরা জড়িত না’ বলে মোবাইল সংযোগটি কেটে দেন।
শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার মো. সাখাওয়াত বলেন, আমি এখানে এসেছি প্রায় দুই বছর হলো। শুনেছি স্টেশনের আশপাশে কিছু অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আসলে আমার কাজের মধ্যে পড়ে না। আমিও চাই এই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হোক।
কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার রোমান উদ্দিন বলেন, বৈদ্যুতিক অফিস বিদ্যুৎ সরবরাহ কাজে নিয়োজিত। বৈধ সংযোগ দেওয়া প্রতি বাসায় একটি করে মিটার দেওয়া হয় এবং মিটারের রিডিং অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনের অংশ থেকে বিদ্যুৎ বিলের টাকা কেটে নেওয়া হয়। অপরদিকে, মাস শেষে রেলওয়ে এলাকায় ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল পিডিবি (ওয়াপদা) অফিসে পরিশোধ করে রেলওয়ে। তবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নিবাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর বাহার বলেন, যারা এক মিটার থেকে একাধিক মিটার চালান ও রেলয়ের কৃষিখাতে লিজকৃত ভূমিতে শুধুমাত্র সেচের জন্য সংযোগ নিতে পারবে। বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাধ্যতামূলক জমা দিয়ে সংযোগ নিতে হয়। যারাই অবৈধ্যভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।