• জুলাই ১১, ২০২৩
  • লিড নিউস
  • 198
জৈন্তাপুরে বাসচাপায় ৫ জনের মৃত্যুর পর উল্টো ধর্মঘট করছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের জৈন্তাপুরে গত শুক্রবার রাতে বাসের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। হয়নি মরদেহের ময়নাতদন্তও। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা চেয়েছিলেন, দুর্ঘটনাটির জন্য যাঁরা বহুলাংশে দায়ী, সেই বাসের মালিক-শ্রমিকদের প্রতিনিধি হয়ে কেউ এসে তাঁদের প্রতি সহমর্মী হোক। তবে তেমনটা হয়নি। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা সালিসের মাধ্যমে চেয়েছিলেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ছাঁটাই করতে। এ জন্য তাঁরা গত রোববার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে কিছু বাস ও মিনিবাস আটকে দেন। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সিলেটের পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা।

অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ছাঁটাইয়ের লক্ষ্যে সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস আটকে দেওয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘট করছেন মালিক-শ্রমিকেরা। সড়কটি দিয়ে সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন তাঁরা। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলাচল করা যাত্রী; জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, জাফলংসহ আশপাশের হাজারো বাসিন্দা এবং এসব এলাকায় ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকের।

ধর্মঘট ডাকার পাশাপাশি সিলেট জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার আবেদন করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বাস আটকানোতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, এমন অভিযোগ এনে কামাল আহমদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিকেরা।

উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহতের জেরে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বাস আটকেছিলেন। এর দায় এখন এককভাবে তাঁর ওপর চাপানো হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহনশ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় বাসচাপায় পাঁচজন নিহতের পর স্বজনেরা কোনো মামলা করেননি। পরদিন শনিবার বিকেলে নিহত ব্যক্তিদের জানাজার আগে-পরে পরিবহনশ্রমিক-মালিকদের পক্ষের কোনো প্রতিনিধি সমবেদনা জানাতে না আসায় ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর ১৭ পরগনায় সালিস সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত হন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা। এ সময় তাঁরা বৈঠকে কথা বলতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের কথা বলতে দেননি।

বৈঠকে সালিস সমন্বয় কমিটি থেকে জানানো হয়, বৈঠকটি স্থানীয় বাসিন্দারা আয়োজন করেছেন। সেখানে পরিবহনশ্রমিক ও মালিকদের অংশ নেওয়ার কথা নয়। কোনো কথা থাকলে সালিস কমিটির সঙ্গে তাঁদের আলাদাভাবে বৈঠক করতে হবে। এরপর পরিবহনশ্রমিক সংগঠনের নেতারা কোনো কথা না বলেই চলে যান। সালিস কমিটির বৈঠকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে বারবার দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের ছাঁটাইয়ের দাবি ওঠে। সে অনুযায়ী, সালিস সমন্বয় কমিটি রোববার মহাসড়কটিতে চলাচল করা কয়েকটি বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।

বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের কথা বলতে না দেওয়ায় এবং রোববার সড়কে বাস চলতে না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন পরিবহননেতারা। বাস আটকে দেওয়ার অভিযোগে তাঁরা জৈন্তাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এতে প্রধান অভিযুক্ত করা হয় জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদকে।

সিলেট জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির বলেন, সরকারি রাস্তায় যানবাহন আটকালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আটকাবে। রাস্তাটি স্থানীয় কারও নয়। গাড়ি আটকিয়ে সাধারণ পরিবহনশ্রমিকদের হয়রানি করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। টানা দুই দিন ধর্মঘটের পর আগামীকাল বুধবার থেকে পুরো বিভাগজুড়ে ধর্মঘট আসতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন জিয়াউল।

সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল হক বলেন, ‘পরিবহনশ্রমিক ও মালিক সংগঠনের দাবির বিষয়টি প্রশাসনের সবাইকে জানানো হয়েছে। এরপরও আমাদের কোনো আশ্বাস কিংবা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর কারণে ধর্মঘট অব্যাহত আছে।’

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, গতকাল সোমবার রাতে জৈন্তাপুরে ১৭ পরগনার সালিস সমন্বয় কমিটির দুটি বৈঠক হয়েছে। এতে বলা হয়, মহাসড়কে স্থানীয় বাসিন্দারা যানবাহন বন্ধ করেননি। এটি বন্ধ করেছেন পরিবহনশ্রমিক-মালিকেরা। যেহেতু তাঁরা যানবাহন বন্ধ রেখেছেন, এর ফলে এখন মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হলে এই সালিস সমন্বয় কমিটিকে অবহিত করতে হবে। এ ছাড়া সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল হককে সালিস সমন্বয় কমিটির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তগুলো সালিস সমন্বয় কমিটির। এটিকে তাঁর সিদ্ধান্ত বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আগের সিদ্ধান্তগুলোও সালিস সমন্বয় কমিটির ছিল।