• ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
  • লিড নিউস
  • 166
‘চাপমুক্ত’ মোমেন-ইমরান-মান্নান

নিউজ ডেস্কঃ ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ইমরান আহমদ ও এম এ মান্নান। সরকারের হেভিওয়েট তিন মন্ত্রী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকার কাণ্ডারি তারা। সোমবার প্রতীক নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন ভোট যুদ্ধে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি আসনে অন্য প্রার্থীরা যখন টেনশনে, তখন ভোটের মাঠে ‘চাপমুক্ত’ এ তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। নিজেদের এলাকায় সংসদ সদস্য হয়ে মন্ত্রী হিসেবে রাজ করেছেন গেলো ৫ বছর। এবার ভোটের মাঠেও ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ তারা। এ তিন প্রার্থীকে নিয়ে অনেকটা নির্ভার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটাররাও এমন তথ্য দিয়েছেন।

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। কিন্তু নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন না করার ইস্যুতে রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তিনি। এতে ড. মোমেনের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিমিষেই সরে গেলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ড. মোমেন। এছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পান পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগরের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবুল। কিন্তু ড. মোমেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়ে আগেবাগেই নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ান। এ জন্য স্বশরীরে বাবুলের গোটাটিকর অফিসে উপস্থিত হয়ে কৃতজ্ঞতা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

অবশ্য হেভিওয়েট এই প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করবেন আরো চার প্রার্থী। আক্ষরিক অর্থে ড. মোমেনের সঙ্গে শিক্ষা, পরিচিতিসহ সব সূচকে পিছিয়ে তারা। যে কারণে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে নির্ভার ড. মোমেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ইসলামি ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ইউসুফ আহমদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস’র মোহাম্মদ সোহেল আহমদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আব্দুল বাছিত।

সিলেট-৪ আসন, ১৭৭৩ সাল থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সাত মেয়াদেই আসনটিতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কল্যাণ মন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। সিলেটের সীমান্ত জনপদের তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী। এবারো আসনটিতে অনেকে দলের মনোনয়ন চাইলেও ইমরানকে নৌকা থেকে বঞ্চিত করার সাধ্য হয়নি কারো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাকেই মনোনয়ন দেয়। ফলে নৌকা না পাওয়া নেতারা আপনা-আপনি ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান। যে কারণে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে অন্যদের সঙ্গে আকাশ-পাতাল তফাৎ ইমরানের। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ইসলামি ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. নাজিম উদ্দিন (কামরান) এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল হোসেন। প্রভাব-প্রতিপত্তিতে ইমরান আহমদের দ্বারে কাছেও নেই তারা। যে কারণে প্রার্থীর সঙ্গে নেতাকর্মীরাও রয়েছেন স্বস্তিতে।

একইভাবে সুনামগঞ্জ-৩(জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ)আসনেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে। এ জন্য স্বস্তিতে আছেন দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান সাংসদ এম এ মান্নান নৌকা প্রতীকে শক্তিধর প্রার্থী। ভোটে লড়তে জমিয়ত ছেড়ে তৃণমূল বিএনপি’র সোনালী আশঁ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির তৌফিক আলী (লাঙ্গল) এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির তালুকদার মো. মকবুল হোসেন কাঁঠাল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এ তিন আসনের ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হেভিওয়েট এই তিন প্রার্থীর সঙ্গে অন্য প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সার্বিক ভাবে দুর্বল। কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অনেকে ভোটের মাঠে থাকলেও তাদের অনেকের ব্যক্তি পরিচয় নেই, নেই জনসম্পৃক্ততা। উপরন্তু তারা ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েটদের বিপক্ষে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন, অনেকে সব কেন্দ্রে অ্যাজেন্ট দিতে পারবেন কিনা, তা দেখার বিষয়!

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ই জানুয়ারি। গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

তফসিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল, ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর বাছাই, ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর আপিল ও শুনানি, ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণায় নামেন প্রার্থীরা। আগামি ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচারের সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।সূত্র বাংলানিউজ