- ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
- লিড নিউস
- 111
নিউজ ডেস্কঃ টিলার মাটি কেটে প্লট ভরাট করা হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করতে গিয়েছিল সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। ঘটনাস্থলে সংবাদের সত্যতাও পান তারা। এসময় টিলার মাটিসহ তিনটি ট্রাক জব্দকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে ট্রাক নিয়ে উধাও হয়ে যায় টিলা কর্তনকারীরা।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় সিলেট সদর উপজেলার পরগনা বাজার নোয়াগাঁও এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতেই ৮ জনের নাম উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র টেকনিশিয়ান আল মামুন সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান (রহ.) থানা মামলা দায়ের করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র শাহপরান (রহ.) থানাধীন পরগনা বাজার এলাকার পলি রোড, নোয়াগাঁও মোতছির ভবনের পাশে টিলার মাটি দ্বারা প্লট ভরাট সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসময় দেখা যায় সিলেট জেলার সদর উপজেলার খিদিরপুর মৌজার জেএল নং ৬০, খতিয়ান নং ১২৮, দাগ নং ২৫১, ২৫২ নং দাগে আবদুছ ছোবহান, আব্দুল হান্নান, আব্দুল বারী, আব্দুর রবের মালিকানাধীন টিলা ভূমি থেকে রাতে মাটি কেটে সুরমা গেইট সংলগ্ন বাইপাস এলাকায় স্তূপাকারে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অভিযানে টিলার মাটি সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া খুনিরচক এলাকার মো. পাভেল আহমদের মাধ্যমে প্লট ভরাটের সময় টিলার মাটিসহ ৩টি ট্রাক সিলেট মেট্রো-ট: ১১-০০৬৪, সিলেট মেট্রো-ড: ১১- ০২৪০, সিলেট-ড: ১১-২৩৬০ আটক করা হয়। এসময় খাদিমপাড়া এলাকার স্বপন আহমদ তুহিন, সেলিম চৌধুরী, বাবুল আহমদসহ আরও কয়েকজন মিলে এনফোর্সমেন্ট টীমের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র টেকনিশিয়ান আল মামুন বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ১৫(১) এর টেবিলের ৫নং ক্রমিক এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৮৬ মোতাবেক শাহপরান (রহ.) থানা মামলা দায়ের করেন।
এই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ, মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র টেকনিশিয়ান আল মামুন, শাহপরান (রহ.) থানার এটিএসআই মো. মাযহারুল, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের নমুনা সংগ্রহকারী রুবেল মিয়া, শাহপরান (রহ.) থানার পুলিশ কনস্টেবল মাহফুজ।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন খুনিরচক, খাদিমপাড়া এলাকার স্বপন আহমদ তুহিন (৪০), একই এলাকার সেলিম চৌধুরী (৩৮), দাসপাড়া এলাকার বাবুল আহমদ (৪২), সিলেট নগরীর সাগরদিঘীরপাড় এলাকার আবদুছ ছোবহান, আব্দুল হান্নান, আব্দুল বারী, আব্দুর রব ও মো. পাভেল আহমদ (৪৫)। এছাড়াও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র টেকনিশিয়ান আল মামুন বলেন, আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযাএন গিয়েছিলাম। তখন আমরা দেখি টিলার মাটি কেটে কর্তনকারীরা সুরমা গেইট সংলগ্ন বাইপাস এলাকায় স্তূপাকারে রেখেছে। পাশাপাশি সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া খুনিরচক এলাকার মো. পাভেল আহমদের মাধ্যমে প্লট ভরাট করছে। এসময় টিলার মাটিসহ ৩টি ট্রাক জব্দকালে জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় টিলা কর্তনকারীরা।
এ ব্যাপারে শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দিলে আমরা মামলা গ্রহণ করে পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। এখন মামলার তদন্ত, চার্জশীট আসামি ধরা সব তারাই করবেন। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সহযোগিতা তারা চাইলে আমরা করবো।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত জমির মালিক ও অপরাপর আসামীগণ পারস্পরিক যোগসাজশে টিলা ভূমি কর্তন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬(খ) অনুযায়ী বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং একই আইনের ১৫ (১) এর টেবিলের ৫নং ক্রমিক অনুযায়ী বিচার্য। তাছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সরকারি দায়িত্ব পালনকালে আসামিগণ বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করেছেন, যা দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৮৬ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেছি। পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ অনুসারে পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক অভিযোগপত্র/চার্জশীট আদালতে দাখিল করবেন। গতকাল মামলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরে এই মামলার এখনও নাম্বার পড়েনি। মামলার নাম্বার পড়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।