- জুন ১১, ২০২৪
- জাতীয়
- 69
নিউজ ডেস্কঃ আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। সে সময় তাকে নিয়ে সমালোচনা যেমন ছিল, তেমনই কিছু ভালো কাজের জন্য প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হারান মন্ত্রিত্ব। তবে রাস্তায় বের হলে এখনো তাকে মানুষ ‘চিনে ফেলে’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘দেশের বেসামরিক (সাধারণ) মানুষ এখনো রাস্তায় বের হলে আমাকে চিনে ফেলে। পথে-ঘাটে তারা এগিয়ে এসে কথাও বলে। এই তো পরশু, ফার্মগেটের দিক দিয়ে ফুটপাতে হাঁটছিলাম। এক তরকারি বিক্রেতা এগিয়ে এসে বলেন, স্যার, আপনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন ছাড়লেন? আপনি মন্ত্রাণালয় ছাড়াই (না থাকায়) দেশে লেখাপড়া হচ্ছে না, আমাদের সন্তানরা ভালো পড়াশোনা করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাকে এটা বলেন। ব্যাপারটা যেন এমন যে, আমি ইচ্ছে করে মন্ত্রণালয় ছাড়ছি, আবার চাইলেই আসতেও পারবো! এটা আসলে মানুষের আকাঙ্ক্ষা। তাদের মনে হয় যে, আমি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে শিক্ষার ক্ষতি করেছি। আসলে আমি ক্ষতি করেছি বা অন্য যিনি দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি ক্ষতি করেছেন ব্যাপারা এমন না।’
মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলনে’ অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগ-অনুযোগের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘যে কোনো পরিবর্তন এলে নানান সমস্যা দেখা দেয়। হয়তো সেই পরিবর্তনের ইতিবাচক ফলটা তাৎক্ষণিক না পেয়ে অনেক অভিভাবক অসন্তুষ্ট থাকেন। সেজন্য অনেকে রাগ-ক্ষোভ থেকে অভিযোগ করে থাকেন। এটা একটা সমস্যা। এটা কাটিয়ে উঠতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে কী কী ভূমিকা রেখেছিলেন, তা তুলে ধরে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আগে মেয়েরা পিছিয়ে ছিল। স্কুলে আসতে চাইতো না। আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। উপবৃত্তি পৌঁছে দিয়েছি। তখন এতটা সহজও ছিল না। তার ফল এখন পাচ্ছি আমরা।’
‘এসএসসি পর্যন্ত এখন আমাদের দেশে মেয়েরা বেশি লেখাপড়া করছে, বেশি ভালো ফলাফল করছে। মেয়েরা কোথায় ছিল, আর এখন কোথায় পৌঁছে গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আগে তো অত বড় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও ছিল না। মেয়েদের ভালো ফল করার সুবাদে সবার কাছে বড়সড় বলে গণ্য হয়েছে। দেশ-বিদেশে আলোচনা হয়েছে। তখন সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তার আগে অত গুরুত্ব পেত না।’
ফেলের হার বাড়ছে উল্লেখ করে সাবেক এ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম, তখনও অনেক শিক্ষার্থী ফেল করতো। অনেক স্কুল ছিল বিভিন্ন বোর্ডের অধীনে, সেটা ২০-৩০ থেকে ৪০টা পর্যন্ত থাকতো যেখানে একজনও পাস করতো না। কিন্তু এবারের তথ্যে আমি বিস্মিত। এ বছর ৩ লাখের বেশি ফেল করেছে। ৫১টা স্কুলের কেউ পাস করেনি। আরও মর্মান্তিক খবর আছে ফলাফলের মধ্যে। সেগুলো বলছি না। উল্লেখ করলেও মনটা খারাপ হয়। তাহলে বুঝে নেন আমরা এগোচ্ছি, নাকি পেছাচ্ছি। এসব দিকে আমাদের আরও নজর দেওয়া দরকার।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। অতিথি ছিলেন লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, অভিনেতা ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ, সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ, এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত প্রমুখ।