• সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪
  • শীর্ষ খবর
  • 7
সিলেটে নিরাপত্তার কারণে গাওয়া যায়নি জাতীয় সংগীত

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে জাতীয় সংগীত বদলানোর অন্যায্য দাবির প্রতিবাদে ‘সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’-এর আয়োজন করেছিল বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এই আয়োজনে একাত্মতা জানায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবার চাওয়া ছিল একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়া। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে এই আয়োজনটি স্থগিত করা হয়েছে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আয়োজকদের পক্ষে নাট্যকর্মী অরূপ বাউল এক পোস্টে এই আয়োজন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের আয়োজন করেছিলেন তারা। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সেদিন জাতীয় সংগীতের আয়োজনটি ৬ সেপ্টেম্বর কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে করার উদ্যোগ নেন তারা। কিন্তু এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই আয়োজনকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজন বলে প্রোপাগান্ডা চালায় একটি দলের অনুসারীরা। এই প্রোপাগান্ডার প্রেক্ষিতে তারা জাতীয় সংগীতের আয়োজনকে প্রতিহত করতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আয়োজকরা নিশ্চিত হন। তাই হাজারো মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আয়োজকরা ৬ সেপ্টেম্বরের জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজন স্থগিত করেছেন বলে জানান।

আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে নাট্যকর্মী অরূপ বাউল জানান, ‘‘জাতীয় সংগীত আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের অস্তিত্বের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’। গত ৫ সেপ্টেম্বর আমরা শহিদ মিনারে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাইতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই দিন নিরাপত্তাজনিত কারণে আয়োজনটি করতে না পেরে পরবর্তীতে ৬ সেপ্টেম্বর কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে করার উদ্যোগ নিই। সমবেত কণ্ঠে আমার সোনার বাংলা গেয়ে জাতীয় সংগীত বদলানোর অন্যায্য দাবির প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আমরা পারছি না।’’

‘এই উদ্যোগ নেওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে নিরাপত্তাবিষয়ক সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়। এ ছাড়া এই আয়োজনকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজন বলে প্রোপাগান্ডা চালায় একদল মানুষ। এবং এই প্রোপাগান্ডার প্রেক্ষিতে তারা এই আয়োজনকে প্রতিহত করতেও উদ্যত হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের এই আয়োজন কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের আয়োজন ছিল না। তাই শত শত কিংবা হাজারো লোকের নিরাপত্তার কথা ভেবে জাতীয় সংগীত গাইতে পারছি না। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করতে হচ্ছে।

যে তরুণ, যে যুবা, যে পরিণত বয়সের নাগরিক এবং যে জ্যেষ্ঠ নাগরিক আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, তাদের আবেগকে শ্রদ্ধা করছি, ভাবতে হয়েছে নিরাপত্তার কথা। আমাদের এই ব্যর্থতা মার্জনা করুন। আমরা বাইরে গাইতে পারিনি জাতীয় সংগীত। আমরা বাইরে গাইতে পারছি না জাতীয় সংগীত। কিন্তু বাইরে না পারলেও একা একা তো পারব। যে যেখানে আছি, সেখানেই গাইব। ফেসবুক লাইভে গাইব। ভিডিও রেকর্ড করে নিজের গাওয়া জাতীয় সংগীত আপলোড করতে পারব। জাতীয় সংগীতের লাইনগুলো লিখে দিতে পারব ফেসবুকে। বাইরে হয়তো প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাদের জড়ো হবে না, কিন্তু আমাদের গাওয়া জাতীয় সংগীত ছড়িয়ে পড়বে অন্তর্জালে।’

নাট্যকর্মী অরূপ বাউল বলেন, ফেসবুকে ‘সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’-এর আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর অনেক মানুষ এই আয়োজনে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কারণ আমার কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষে এই আয়োজন করিনি। অনেক নারী, শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত গাইতে আমাদের সঙ্গে আসবে বলে জানায়। কিন্তু ফেসবুকে এই আয়োজনকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজন বলে প্রোপাগান্ডা চালায় কিছু মানুষ। এবং আমরা জানতে পারি আমাদের আয়োজনে হামলা করতেও তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তা দিতে অপারগতা ছিল। এখন আমি একা হলে আমার দায়িত্বে জাতীয় সংগীতের আয়োজনটি করে ফেলতাম। কিন্তু এই আয়োজনে ইতোমধ্যে সাধারণ নারী, পুরুষ, শিশুদের অংশগ্রহণের বেশি হবে বলে বুঝতে পারি। দেখা যাবে জাতীয় সংগীত গাইতে শত শত বা হাজারো মানুষ উপস্থিত হবে। তখন যদি তাদের ওপর হামলা হয় তাদের নিরাপত্তা তো আমি দিতে পারব না। তাই এই আয়োজন স্থগিত করেছি।’

অপরদিকে জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর একযোগে সারাদেশে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ঢাকাসহ সারা দেশে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এই কর্মসূচি পালন করলেও সিলেটে ঘোষণা দিয়েও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে সিলেট উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বললে তারা জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের সমস্যার কারণে তারা এই আয়োজন করতে পারেননি।

জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি পালন না করার ব্যাপারে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেটের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের একযোগে সারা দেশে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি পালন করতে আমরাও ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে আমরা ঘোষণা দিয়েও জাতীয় সংগীতের আয়োজন করতে পারিনি। জাতীয় সংগীত তো কয়েকজন মিলে গাইলে হবে না। আবার একদিনের নোটিশে বেশি মানুষ আনাও সম্ভব না। তাই আমরা সিলেটে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজন করতে পারিনি।’