• অক্টোবর ১১, ২০২৪
  • মৌলভীবাজার
  • 10
রাজনগরে লাল রঙের দেবী, যে দুর্গা দেশের কোথাও নেই

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভী বাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের সাধক স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রম লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পূজা। পাঁচগাঁও গ্রামের দুর্গাপূজা দেশের অন্য সব জায়গার চেয়ে আলাদা। কারণ এখানকার দেবী লাল রংয়ের হয়। বৃহত্তর সিলেট ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এমনকি ভারত থেকেও প্রচুর ভক্ত আসেন এই পূজা মণ্ডপে। পূজার সপ্তমী থেকে নবমী এই তিন দিন কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাখ লাখ দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। পূজা পালনকারীরা জানান, দেশের আর কোথাও লাল রঙের দেবী দুর্গা নেই। শুধু ভারতের আসাম ও কামাক্ষায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে।

প্রতিবছর উৎসবমুখর পরিবেশে দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এ মণ্ডপে। এখানে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের নানা মনকামনা নিয়ে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। পূজার সপ্তমী ও নবমীতে পশুবলিতে হাজারখানেক পাঁঠা, কয়েকটি মহিষ, অগণিত হাঁস ও কবুতর বলি দেওয়া ছাড়াও অনেকেই বস্ত্র, অলংকারও নিবেদন করেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউবা প্রদীপ, আবার কেউ কেউ আগরবাতি প্রজ্জ্বলন করেন দেবীর উদ্দেশে।

পাঁচগাঁওয়ের লাল দুর্গার পূজা মূলত একটি পারিবারিক আয়োজন। বর্তমানে এই আয়োজনের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন সাধক সর্বানন্দ দাসের ষষ্ঠ বংশধর সঞ্জয় দাস। এ বিষযে সঞ্জয় দাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এই পূজা আমাদের পারিবারিক উৎসব। তবে দেবীর জাগ্রত উপস্থিতির কারণে প্রতিবছরই লোকসমাগম বাড়ছে। এ জন্য পূজার এই কয়েক দিন হিমশিম খেতে হয়। তবে কোনো সমস্যা হয় না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। এবারও স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসন থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তারা সব সময় আমাদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আছেন।’

এলাকায় প্রচলিত আছে, সাধক পুরুষ স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষায় গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের মেয়ে শিশু চান। পরে কামাক্ষার স্থানীয়রা তাকে একটি মেয়ে শিশু দেন। সাধক সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েটিকে পূজা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির গায়ের রং বদলে লাল হয়ে যায়। বিস্মিত সাধক বুঝতে পারেন, মেয়ের মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করছেন। সেই মেয়ে ওই সময় সাধককে বলেন, তুমি আমার কাছে বর চাও। আমি তোমাকে বর দেব। সাধক ওই সময় তার কাছে বর চাইলেন। এরপর দেবী নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রং লাল হবে। সাধক দেবীকে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে যেন দেখা দেন, সেই আকুতি জানান। সেই সময় থেকে এখানে লাল বর্ণের মূর্তির পূজা হয়ে আসছে। পূজার একপর্যায়ে সাধক দেবীর কাছে আকুতি জানান, তিনি (দেবী দুর্গা) যে এখানে এসেছেন, তার প্রমাণ কী? ওই সময় দেবী দুর্গা তার হাতের পাঁচ আঙুলের লাল ছাপ আগে নির্মিত কাঁচাঘরের বেড়ায় লেপ্টে দেন। দেবীর মাথার স্বর্ণের টিকলি রেখে যান। সেই থেকেই এখানে লাল বর্ণের মূর্তিতে দেবীর পূজা হয়ে আসছে।

এমনকি পূজার সময় এখনো রেখে যাওয়া গয়না দেবী দুর্গার প্রতিমাকে পরানো হয়।

এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে জেলা শহরের বেশ কয়েকটি পূজা মণ্ডপের নান্দনিক মূল ফটকসহ দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয়েছে। প্রতিবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। প্রায় ৪৫০টি দোকানে বেচাকেনা হয় খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, খেলনা ইত্যাদি। আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব উদযাপনে সর্বত্র নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

রাজনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান, এবারের দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থায় উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা পুলিশ।’