• জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
  • লিড নিউস
  • 2
সিলেটে টমেটোর বীজে প্রতারণার অভিযোগ

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক টমেটো চাষি অভিযোগ করেছেন, কুশিয়ারা বীজঘর ‘রাজা’ জাতের টমেটোর বীজের নামে ইপক জাতের বীজ সরবরাহ করেছে। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চাষিরা জানান, কুশিয়ারা বীজঘরের কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত তা দেয়নি। কৃষি অফিস তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তবে কুশিয়ারা বীজঘর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করছে।

সিলেটের সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের পাগইল গ্রামের টমেটো চাষি রমজান আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি টমেটো চাষের জন্য ‘রাজা’ জাতের বীজ কিনেছিলেন। কিন্তু ফলনের পর তিনি দেখতে পান, এটি ‘ইপক’ (হাইব্রিড) জাতের টমেটো। এর ফলে চাষিরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলন থেকে বঞ্চিত হন এবং তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। রমজান আলী দাবি করেন, কুশিয়ারা বীজঘর কর্তৃপক্ষ বীজে জালিয়াতি করেছে। প্যাকেটে ‘মঙ্গল রাজা’ লিখে ভেতরে ইপক জাতের বীজ পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমি লোকসান গুনছি।’

সিলেট সদর উপজেলার আরও কয়েকটি গ্রামের শতাধিক টমেটো চাষি একই অভিযোগ করেছেন। তাদের মতে, কুশিয়ারা বীজঘরের প্রতারণার কারণে তারা সব ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কৃষকরা জানান, তারা প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করেছিলেন, যেখানে ১০০ চাষির ৫০ হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছে ইপক জাতের টমেটো। এতে বিঘাপ্রতি প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে চাষিদের।

কুশিয়ারা বীজঘরের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, তারা কৃষকদের রাজা জাতের টমেটো বীজের নামে ইপক জাতের বীজ সরবরাহ করেছে। গত ডিসেম্বর মাসে সিলেট জেলা প্রশাসকের কক্ষে জরুরি সভায় এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। কুশিয়ারা বীজঘরের স্বত্বাধিকারী স্বীকার করেছেন, তাদের সরবরাহ করা ২ হাজার ১০০ প্যাকেট বীজে ভেজাল ছিল। এর পর তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। কুশিয়ারা বীজঘর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের কথা অস্বীকার করেছেন।

চাষি খিজির উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর টমেটো চাষে আমরা সামান্য লাভের আশায় রাজা জাতের টমেটো চাষ করেছিলাম। কিন্তু বীজের ভেজালের কারণে আমাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, যারা তার কাছ থেকে চারা কিনেছিলেন, তারা ফলন না হওয়ার কারণে এখন টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। একইভাবে মো. আজমল আলীও ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে টমেটো চাষে আমরা ১ লাখ টাকা আয় করতে পারতাম, এখন ওই টমেটো বিক্রির টাকা পর্যন্ত উঠছে না।’

কুশিয়ারা বীজঘরের স্বত্বাধিকারী লিটুর মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি পুরো নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। বীজে ভেজাল দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কিছু হয়নি। আমরা কেন ক্ষতিপূরণ দেব?’

সিলেট সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার জানান, কৃষকরা সরাসরি অভিযোগ করেছেন। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। কুশিয়ারা বীজঘরের স্বত্বাধিকারী স্বীকার করেছেন, তাদের ২ হাজার ১০০ প্যাকেট বীজে ভেজাল ছিল। তারা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এখন তারা ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করছেন। এটি আরেক ধরনের প্রতারণা। কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে থাকবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপে সহায়তা করবে।