- জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
- জাতীয়
- 4
নিউজ ডেস্কঃ দেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম বলেছেন, নিপীড়ক সরকার তার ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দেশের ক্ষতি করে পার্শ্ববর্তী দেশকে সুযোগ দেওয়ার জন্য, প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করতে ও আমাদের দেশে বলিষ্ঠ সেনাবাহিনী-বিডিআরকে দুর্বল করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
হাসিনা সরকারের জন্য বিডিআরের নির্দোষ সদস্যদের কোরবানি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবারের সদস্যদের আয়োজনে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় পুনঃতদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপনে (ঙ) নম্বর ধারা বাতিল ও সুষ্ঠু বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং চাকরিচ্যুতদের পুনঃবহালের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শহিদুল আলম বলেন, আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় নিয়মিত বিডিআর সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বিষয়টা যখন আমার পরিবার ও বন্ধুরা জানতে পারার পরে আমাকে তারা নিষেধ করেছেন। তারা বললেন এটা জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। বিডিআর সদস্যদের সাক্ষাতের অনেক নোট আমার কাছে আছে। সেই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতেই আমি কথা বলছি।
তিনি বলেন, যেই নিপীড়ক সরকারকে আমরা কষ্ট করে হটিয়েছি। এই নিপীড়ক সরকার তার ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দেশের ক্ষতি করে পার্শ্ববর্তী দেশকে সুযোগ দেওয়ার জন্য, প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করতে ও আমাদের দেশে বলিষ্ঠ সেনাবাহিনী-বিডিআরকে দুর্বল করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা পরিষ্কার এর পেছনে তাপস, তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জড়িত ছিল। এটা ঠিক এখন এটা বলতে পারছি, ৫ আগস্টের আগে সেই সুযোগ ছিল না।
শহিদুল আলম বলেন, কারাগারে আমার অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেকের নাম আমি বলতে পারবো। ছোট করে যদি বলি হবিগঞ্জের বিডিআর সদস্য রিয়াজ হোসেন চৌধুরী। সে মামলার ৩১২ নম্বর আসামি। সে মেজর শফিকুল ইসলামের বডিগার্ড ছিলেন। বিদ্রোহের সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শফিকুল ইসলামের স্ত্রী পালাতে সহযোগিতা করেন। যাতে তিনি নিরাপদে বের হতে পারেন। শুধু রিয়াজ না তাদের মতো শত শত বিডিআর সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব নিরীহ মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব নিরীহ মানুষগুলোকে এই নিপীড়ক সরকার নিজের স্বার্থে কোরবানির খাসি বানানো হয়েছে। তাদের বলি দেওয়া হয়েছে। এখন যেভাবে চলছে সেটি যদি চলতে থাকে তাহলে কোরবানির খাসিদের রক্ষা করতে পারবো না। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে এসব ভাই-বোনদের প্রতি যারা আমাদের রক্ষায় জীবন ঝুঁকি নিয়েছে। এখন সময় এসেছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর।
তিনি আরও বলেন, আমি আরও কিছু বিষয় বলতে চাই এটা তো পরিষ্কার। কারা এসেছিল, কারা এই হত্যায় জড়িত সবই আমাদের জানা রয়েছে। তারপরে আজকে যখন আমরা একটা স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আছি। যখন আমরা স্বৈরাচারকে হটিয়েছি, যখন আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষার সরকারকে পেয়েছি তখন এই পরিস্থিতিতে মুশতাক আহমেদ মারা গেছে। এতগুলো মানুষকে যারা অত্যাচার করেছে। যে ভাই-বোনেরা নির্দোষ তাদের প্রতি এই অত্যাচার করা হচ্ছে এটা কি করে সহ্য করবো।
তিনি বলেন, আমি নিজে ভুক্তভোগী কীভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে। কিভাবে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। কীভাবে আদালতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিচারক নিজেই বলেছেন মামলায় যে কথা বলা হয়েছে একটারও কোনো প্রমাণ নেই। বিডিআরের ক্ষেত্রে যা যা বলা হয়েছে তার একটারও কোনো প্রমাণ নেই। অথচ সেই ভয়টা ছিল সে কারণে কেউ কথা বলতে পারেনি। কি কারণে বাইরের গাড়ি সেখানে প্রবেশ করে। কি কারণে অ্যাম্বুলেন্স আসে। কাদের সুযোগ দেওয়া হয়। রহস্যজনক কারণে কাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কি কারণে আটক করা হয়। কাউকে কাউকে খুন করা হয় যাতে সত্য তথ্য বের হয়ে না আসে সেই বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কার। তারপরও আমরা এই অন্যায়টা হতে দিতে পারি না। আমরা চাই সুবিচার। আমরা অবশ্যই চাই নতুন কমিশন প্রকৃত তদন্ত করে নির্দোষ মানুষকে এখনো জেলে রাখা হয়েছে। যাদের যৌবন চলে গেছে। মা-বাবা মারা গেছে। স্ত্রী চলে গেছে। মারা গেছে। তাদের প্রতি ন্যায়বিচার আশা করি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিলখানা হত্যা মামলায় গঠিত কমিশনের প্রজ্ঞাপনের (ঙ) নম্বরে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধে ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তদের দায়/অপরাধ অক্ষুণ্ন রেখে যাদের সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমন প্রকৃত অপরাধীদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, এই ধারার মাধ্যমে যারা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছে তাদরে প্রতি অন্যায় করা হবে। কারণ কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যরা নিরপরাধ ও নির্দোষ হওয়ার পরেও তারা কারা নির্যাতিত হচ্ছেন। এই ধারা থাকলে কমিশন কখনোই সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারবে না।
এ সময় সংবাদ সম্মেলন থেকে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
খুনি হাসিনার প্রহসনমূলক রায় বাতিল বা স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলবন্দি সব বিডিআর জওয়ানকে মুক্তি দিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
পূর্বের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপন থেকে ‘ব্যতীত’ নামক শব্দটি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ‘ঙ নম্বর’ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করতে হবে।
খুনি হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে যে ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর জওয়ানদের অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে তাদের সম্পূর্ণ সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতিকে সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা এবং কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা দিতে হবে। এছাড়া কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের নিরাপত্তায় গাড়ি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে।