- জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
- আন্তর্জাতিক
- 2
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। দেশটির ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ নথিতে এই তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এরপরই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে।
ফাঁস হওয়া ওই নথি অনুযায়ী, আগামী ৯০ দিনের জন্য সব মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যেসব বৈদেশিক সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোটিশে উন্নয়ন সহায়তা থেকে সামরিক সহায়তা পর্যন্ত সবকিছুর ওপর প্রভাব পড়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে এই স্থগিতাদেশ জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের জন্য সামরিক তহবিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ফাঁস হওয়া নথির বিষয়বস্তু বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে।
ওই নথি অনুযায়ী, পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন তহবিল অনুমোদিত হবে না বা বিদ্যমান কোনো চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না বলে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যতক্ষণ পর্যালোচনা শেষ না হয় একই সঙ্গে চলমান প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্যালোচনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট চুক্তির শর্তানুযায়ী, কর্মকর্তারা যেন অনতিবিলম্বে কাজ বন্ধের নির্দেশনা জারি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের নথি অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন পররাষ্ট্রনীতি নিশ্চিত করতে সব বিদেশি সাহায্যের বিস্তারিত পর্যালোচনা আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে কি না।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই নোটিশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য কর্মসূচির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার কথাটি একবার ভাবুন। এটি অনেক বড় একটি বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন জশ পল। তিনি ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত অস্ত্র সরবরাহে কংগ্রেসের সম্পর্ক দেখভাল করতেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ইউএসএইড মিশনের সাবেক পরিচালক ডেভ হার্ডেন বিবিসিকে বলেন, এই পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ যা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে মানবিক এবং উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিগুলোকে স্থগিত করে দিতে পারে।
তিনি জানান, বিদেশি সহায়তা বন্ধের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পানীয়, স্যানিটেশন এবং আশ্রয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে পড়তে পারে। এটি শুধু সহায়তা স্থগিতই নয় বরং ইতোমধ্যেই দেশটির অর্থায়নে চলমান চুক্তিগুলোর কাজ বন্ধেরও নির্দেশ প্রদান করে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই অর্থায়ন স্থগিতের প্রভাব ইউক্রেনেও পড়তে পারে। সেখানে আগে থেকেই প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা দেওয়া হয়েছিল। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময় ইউক্রেন অস্ত্র সহায়তায় বড় অংকের সহযোগিতা পেয়েছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও স্বাক্ষরিত নথিতে সহায়তা স্থগিতের পক্ষে যুক্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি কার্যকর এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কি না এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা মূল্যায়ন করা অসম্ভব।
তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি করেছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যেসব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতির পর মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সুদানের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের ঘটনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে।
মার্কিন সরকারের নীতিতে নিজের প্রভাব রাখতে প্রেসিডেন্টদের মূল হাতিয়ার এক্সিকিউটিভ অর্ডার বা নির্বাহী আদেশ। ক্ষমতা নেওয়ার পর সেই হাতিয়ার ব্যবহারে এক মুহূর্তও দেরি করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতেই একশোর বেশি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।