• জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
  • লিড নিউস
  • 3
সিলেটে শত্রুতায় চাষাবাদ নষ্টের কষ্টে বর্গাচাষি

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট সদর উপজেলার নীলগাও গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন। তিনি একজন বর্গাচাষি। অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে যে আয় করেন, সেটা দিয়েই তার সংসার চলে। চলতি বোরো মৌসুমে সদর উপজেলার ছামাউরাকান্দি লাকিবাড়ি হাওরে ২২ বিঘা জমি বর্গা নেন কৃষক জমির উদ্দিন। সেখানে তিনি ধারদেনা করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেন। ধানের চারাগুলো একহাত সমান উঁচু হয়েছিল। এর মধ্যেই গত ১৮ জানুয়ারি সকালে এসে দেখেন তার ২২ বিঘা জমির মধ্যে ১৮ বিঘা জমির ধানের চারা নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখন এই জমিতে ধানের চারা রোপণের খরচের ঋণ পরিশোধ ও সংসার চালানোর চিন্তায় দিশেহারা কৃষক জমির উদ্দিন।

কৃষক জমির উদ্দিন জানান, ‘প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে তিনি এই ২২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। আশপাশের সবার জমির ধানের চারা ঠিক থাকলেও কে বা কারা তার জমির সব ধানের চারা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি গরিব মানুষ। অন্যের জমি বর্গা চাষ করি। এই জমিটি আমি আইনজীবী নূরে আলম সিরাজি সাহেবের কাছ থেকে বর্গা নিয়েছি। আমি ধারকর্জ করে ২২ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। এখন কীভাবে এই ঋণ পরিশোধ করবো আমি বুঝতে পারতেছি না। তা ছাড়া এই ধান বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। এবার তো আর ধান বিক্রি করতে পারব না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কীভাবে চলব ভেবে পাচ্ছি না।

ছামাউরাকান্দি লাকিবাড়ি হাওরে জমির উদ্দিনের পাশের জমিতে ধান রোপণ করেছেন এলাচ মিয়া। তিনি বলেন, ‘জমির উদ্দিনসহ আমরা সবাই এই হাওরে ধানের চাষ করি। সে হঠাৎ করে এসে কেঁদে আমাদের বলতেছে তার জমির ধান কে জানি নষ্ট করেছে। সকালে আমরা জমিতে গিয়ে দেখি ঘটনা সত্যি। সে গরিব মানুষ। ঋণ করে ধান চাষ করেছে। এখন সে কি করবে। কার কাছে বিচার দেবে। তার সংসার কীভাবে চলবে?’

এই হাওরের আরেক চাষি নূর মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই কাজ করে তারা জমির আলীর পাঁচ হাজার মণ ধানের ক্ষতি করছে। এই ক্ষতি শুধু জমির আলীর না, সারা দেশের মানুষের ক্ষতি। এই পাঁচ হাজার মণ ধান তো জমির আলী একা খাবে না। সে বিক্রি করে দিত। তাই আমি মনে করি এই ধান থেকে বঞ্চিত হয়েছে সারা দেশের মানুষ। যদি তার সঙ্গে কারও কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে গ্রামের পঞ্চায়েতে বিচার দিল না কেন? কিন্তু এটা না করে এই ধানের ক্ষতি কেন করল তারা? আমার ৬৭ বছর বয়সে এই হাওরে এ ধরনের ঘটনা আগে দেখিনি।’

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন কৃষক জমির উদ্দিন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কৃষক জমির উদ্দিনের পাশের গ্রাম লামারগাওয়ের জাহাঙ্গীর, আলী হোসেনসহ কয়েকজন তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই ঘটনা তিনি জমির মালিক ও স্থানীয় মুরব্বিদের অবগত করেন। এর পর গত ১৮ জানুয়ারি তারা চাষের ট্রাক্টর দিয়ে জমির সব ধান নষ্ট করে দেয়। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরসহ প্রায় ২০ জনের নামে অভিযোগ করেন জমির আলী।

জমির মালিক আইনজীবী নূরে আলম সিরাজি বলেন, ‘খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। একজন গরিব চাষি চুক্তির ভিত্তিতে এই জায়গাটি নিয়ে ফসল ফলাতে চেয়েছিল। এই জমিটি ফসল ফলানোর উপযুক্ত করতে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। চারা থেকে ধান বেরোনোর সময় দুষ্কৃতকারীরা নষ্ট করে দিয়েছে। এটা শুধু ওই কৃষকের না, দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি করবে। কারণ আমাদের চাল আমদানি করতে অনেক ডলার দিতে হয়। সেক্ষেত্রে এই ২২ বিঘা জায়গার যে ক্ষতি করেছে এই ধান যদি উৎপাদিত হতো তা হলে এটা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখত। যারা এই কাজটি করেছে তারা অবশ্যই ভালো মানুষ নয়, ওরা দুষ্কৃতকারী। আমরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি গরিব মানুষ। আমরা মানবাধিকার কমিশনে দরখাস্ত করেছি। ভুক্তভোগী কৃষকও থানায় এজাহার দাখিল করেছেন।’

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’