- ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
- মৌলভীবাজার
- 11

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারে বাবার হাতে মাহিদ নামে সাত বছর বয়সী ছেলেকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার পর শিশুর বাবা খোকন মিয়া ও দাদি হাওয়া বেগম নিজ ঘরে মরদেহ রেখে গা ঢাকা দেন। পরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ খোকনকে আটক করে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে শিশুর বাবা খোকন মিয়াকে অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা নিয়ে আসা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খোকন মিয়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এলাকায় দীর্ঘদিন মাদক ব্যাবসা করে আসছেন। রোববার বিকালে খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু মাহিদ বিছানায় মলত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাইরে এনে ব্যাপকভাবে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে শিশু মাহিদ সেখান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি যবেদা খাতুনের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে ধরে এনে আবারও মারতে থাকেন। এসময় প্রতিবেশী যবেদা বেগম আটকানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। অবস্থা সংকটাপন্ন দেখলে খোকন মাহিদকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, হাসপাতালে মৃত্যুও কারণ নিয়ে চতুরতার আশ্রয় নেন খোকন। গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পরে সেখান থেকে মরদেহ বাড়ি নেওয়ার কথা বলে পালিয়ে যান তিনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সদর মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হলেও সেখানে মরদেহ ও খোকনকে পায়নি। কিছুক্ষণ পর মরদেহ নিয়ে বাড়িতে গিয়ে মরদেহ রেখে পালিয়ে যান।
জানা যায়, খোকনের প্রথম স্ত্রী ও নিহত শিশু মাহিদের এক ভাই বাড়িতে থাকলেও খোকন এবং তার মা হাওয়া বেগমকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে পুলিশ খোকনকে আটক করে।
প্রতিবেশী যবেদা বেগম বলেন, ‘বাচ্চাটাকে দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে মাথা মারতে থাকে। তখন নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মারধর করার সময় আমি এগিয়ে গেলে আমাকে অন্তত দশহাত দূরে টেনে নিয়ে যায়। এসময় অন্য কেউ সেখানে ছিল না।’
জানা যায়, ১৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন খোকন। কয়েক বছর আগে মনোমালিন্য হওয়ায় প্রথম স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করেন। এসময় মাহিদ (৬) ও রাফিদ (৭) নামের দুই সন্তানকে নিজের কাছে রেখে দেন খোকন।
স্থানীয়রা বলছেন, অনেকদিন ধরে তুচ্ছ কারণে দুই সন্তানের প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালাতেন মাদকাসক্ত খোকন। নির্যাতনের ঘটনা প্রতিবেশীরা দেখলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেননি।