• ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
  • জাতীয়
  • 8
রাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও কীভাবে কমিটি দিয়ে কাজ চালায় বৈষম্যবিরোধী : ছাত্রদল

নিউজ ডেস্কঃ কুয়েটে সদস্য ফরম বিতরণের ‘মিথ্যা অভিযোগে’ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা ও পরবর্তী সময়ে এলাকাবাসী কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয় এবং ঘটনায় ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ও শিবিরের প্রত্যক্ষ মদদে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) গেমস রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, গতকালের সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তাদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাদের নেই।

‘তা ছাড়া, সহিংসতায় ছাত্রদলের সমর্থকেরা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী। যেহেতু কুয়েটে ছাত্রদলের কোনও কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখনও পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনাকে ছাত্রদলের হামলা শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা সর্বৈবভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।’

‘ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধীদের হাত ধরে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, গতকালকের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে কতিপয় ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে। সেই মিছিল থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই ফিরছিল। তখন মিছিলটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক (২০১৯-২০ সেশন) প্রত্যক্ষ হামলার সূচনা করে। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট কমিটির কতিপয় মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিতভাবে তেড়ে গিয়ে হামলা করে।’

‘ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। যার জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের ওপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যাক্কারজনক সহিংসতা।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু না হলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জীবিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত বলে তারাসহ আরও কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারের আড়ালে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক বাহক ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা এবং ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালায়।

‘হামলা বৈষম্যবিরোধীর আহ্বায়ক ওমর ফারুকের নেতৃত্বে হয়েছে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির নেতা এবং সেই কমিটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুকই ছাত্রদলের সেই তিন জন সমর্থককে “ধর! ধরা” বলে প্রথম তেড়ে যান। কুয়েট ক্যাম্পাসে গত ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট থেকে প্রশাসনিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম তারা পরিচালনা করে আসছে, যার বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আবার, এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যাক্কারজনক সহিংসতাকে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “ছাত্রদলের হামলা” বলে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়।’

কুয়েটের ঘটনা নিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, কুয়েটে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে সেটি নিয়ে অনলাইনে ও অফলাইনে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে যে মিথ্যা-অপবাদ চারিদিকে ছড়ানো হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংগঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করার বিষয়টি অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।