• ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫
  • লিড নিউস
  • 20
ওসমানী হাসপাতালে রোগী নিয়ে হিমশিম

নিউজ ডেস্ক: সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল। ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৫০০ শয্যার সুযোগ-সুবিধা আছে। তবে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ রোগী সেবা নেন। জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নেন ৪ হাজারের বেশি রোগী। গত ১০ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে শুধু ভর্তি বিভাগে সেবা নিয়েছেন ২ হাজার ৪৩৮ জন। তীব্র জনবল সংকটের মধ্যেও নিয়মিত মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, সর্ববৃহৎ সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার রোগী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী অন্য জেলার রোগীরাও এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসা সরঞ্জাম, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তি ও সেবা নিয়ে রোগীদের সন্তুষ্টিসহ নানা সূচকে মূল্যায়ন করে স্বাস্থ্যসেবায় সব মানদণ্ডে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে হাসপাতালটি।

তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের শয্যা সংকটের দৃশ্য। হাসপাতালে গাইনি, শিশু, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকসহ প্রায় সবকটি বিভাগের ওয়ার্ড ছাড়িয়ে রোগীরা বারান্দার মেঝেতে থাকছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে রাবেয়া তার নবজাতককে নিয়ে আসেন এ হাসপাতালে। রাবেয়া জানান, ৮ মাসের সময় বাচ্চা প্রসব হয় তার। তাই বাচ্চার শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এই সমস্যার জন্য এনআইসিইউতে নেওয়া হয়েছে বাচ্চাকে। কিন্তু শিশু ওয়ার্ডে সিট পাননি। তাই বাচ্চা এনআইসিইউতে থাকলেও তিনি শিশু ওয়ার্ডের পাশে বারান্দার মেঝেতে থাকছেন।’

রাবেয়ার মতো একই সমস্যা নিয়ে সিলেট নগরীর টুকের বাজার থেকে স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে আসেন শাহজাহান মিয়া। ১৪ দিন ধরে তার বাচ্চা এনআইসিইউতে আছে। শাহজাহান মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাত মাসের সময় আমার স্ত্রী যমজ সন্তান প্রসব করেন। এরপর আমার একটি সন্তান মারা যায়। পরে অপর সন্তানকে নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হই। আজ ১৪ দিন ধরে এনআইসিইউতে আমার সন্তান চিকিৎসাধীন।’

এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির বলেন, ‘৯০০ বেডের ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও হাসপাতালে মাত্র ৫০০ বেডের রোগীদের সুযোগ-সুবিধা আছে। নানা রকম চাপ ও সংকটের মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু সরকারি বা স্বল্প খরচের কারণে এখানে সেবা নিতে মানুষজন আসেন না, এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান অনেক ভালো। তাই মানুষজন আমাদের ওপর আস্থা নিয়ে এখানে আসেন। যেজন্য ধারণক্ষমতা না থাকলেও আমরা রোগীদের ফিরিয়ে দিই না। পাশাপাশি ৫০০ ভর্তি রোগীর খাবারের তহবিল থাকলেও আমরা সব রোগীকে খাবার দিই। জনবল ও শয্যা সংকটের সমাধান হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত আমাদের। কিন্তু সংকটগুলো হুটহাট সমাধান করা যাবে না। কারণ এর সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও জড়িত।’

চিকিৎসাসেবায় সারা দেশে ওসমানী হাসপাতালের সুনাম রয়েছে জানিয়ে পরিচালক আরও বলেন, ‘এখানে প্রতিদিনই অনেক জটিল রোগের সফল অপারেশন হয়। কিছুদিন আগেও হাসপাতালে প্রথমবারের মতো আটজন শিশু হৃদরোগীর দেহে সফলভাবে ডিভাইস বসানো সম্পন্ন করি আমরা। আমাদের চিকিৎসাসেবায় প্রায়ই মাইলফলক হয়ে থাকার মতো বিভিন্ন অস্ত্রোপচার আমরা করি। সুনাম ধরে রেখে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে চাই।’