- মার্চ ১, ২০২৫
- লিড নিউস
- 2

নিউজ ডেস্কঃ শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুরী খাল হয়ে ঢুকবে পানি। সেই পানি নামবে সিলেটের জকিগঞ্জসহ চার উপজেলার হাওর ও বিলে। সেচ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় চাষাবাদের আওতায় আসবে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি। হাওর ও বিলে বাড়বে মৎস্য উৎপাদন।
ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কুশিয়ারা থেকে প্রতিবছর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সুযোগ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু শেখ হাসিনার করা এই চুক্তির ধার ধারছে না ভারত। বিএসএফ’র বাধায় চালু করা যাচ্ছে না শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাম্প হাউসটি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে কৃষিনির্ভর উপজেলা হচ্ছে জকিগঞ্জ। আগে সেচ সুবিধা থাকায় শুষ্ক মৌসুমেও এই উপজেলায় প্রচুর ধান ও রবি শষ্য উৎপাদন হতো। রহিমপুরী খাল, সেনাপতির খাল, মছকন্দর খাল, শিকার মাহমুদ খাল, নাথের খাল, পীরের খাল, মাদারখাল, তেলিখাল, মিলিটারি খাল, কাপনা খাল, জায়গীরদারি খাল, বরজান খাল, বিয়াবাইল খাল, শিবের খাল, বাবুর খাল, ছাগলী খাল, কুদালী খাল, হাতিদাড়া খাল, কুনাই খাল, মরইর খাল, মুরাদ খাল, সুনাম খালসহ শতাধিক খাল দিয়ে পানি নামতো মইলাট ও বালাইর হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে। কিন্তু খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় যৌবন হারায় হাওর ও বিলগুলো। সেচের সুবিধা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে এখন হাজার হাজার একর জমি অনাবাদী পড়ে থাকে।
এই অবস্থায় অনাবাদী কৃষি জমিকে আবাদের আওতায় আনতে ২০০১ সালে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার আপার সুরমা কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে নির্মাণ করা হয় প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। খনন করা হয় সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল ও সাড়ে ৩৯ কিলোমিটার সেচ খাল। ২০১১ সালে প্রকল্পের অধীনে রহিমপুরী খাল খনন ও পাম্প হাউস স্থাপনের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও বিএসএফ’র বাঁধার মুখে রহিমপুরী খাল ও কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থল খনন করতে পারেনি পাউবো। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্পটি। উৎসমুখ বন্ধ থাকায় মরাখালে পরিণত হয় রহিমপুরী খালটি। এই অবস্থায় ২০২২ সালের ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুরী খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী রহিমপুরী খাল দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার হলে জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকার অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসতো। রহিমপুরী খাল ও শাখা খাল দিয়ে পানি উপজেলার বালাইর হাওর, মইলাইট হাওর, মজুমদারী হাওর, ঘেচুয়ার বিল, বিলপাড় ও সিঙ্গাইরকুড়ির বিলে নামতো। ফলে শুষ্ক মৌসুমেও খাল ও হাওর-বিলগুলো পানিতে পূর্ণ থাকতো। এই পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা যেত। হাওর ও বিলগুলোতে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খালের গভীরতা বাড়ায় বন্যার শঙ্কাও কমতো। এছাড়া খাল, বিল ও হাওর দিয়ে পানি পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে নামতো। এতে ওই তিন উপজেলার কৃষিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তো।
কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পরও বিএসএফ’র বাধার কারণে পাম্প হাউসটি চালু করা যাচ্ছে না। রহিমপুরী খালের উৎসমুখ (কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী অংশ) খনন করতে বাধা দেওয়ায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে পাম্প হাউস। এতে সিলেটের চার উপজেলার বিশাল কৃষি ও মৎস্য সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ‘বিএসএফ’র বাধার কারণে রহিমপুরী খালের উৎসমুখ খনন করতে না পারায় পাম্প হাউস চালু করা যাচ্ছে না। উৎসমুখ খনন করতে গেলেই বিএসএফ বাধা দিচ্ছে। ফলে জকিগঞ্জসহ সিলেটের ৫ উপজেলার কৃষি ও মৎস্য উন্নয়নে যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।’