- মে ১, ২০২৫
- লিড নিউস
- 6

নিউজ ডেস্কঃ চা শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি দেওয়া হয় প্রতি মঙ্গলবার। তাই সকালে চা পাতা তুলে বেলা ১টায় লাক্কাতুড়া চা বাগানের দুই নাম্বার লাইনে যান মুক্তি লোহার, সুরবর্ণা নায়েকসহ একদল চা শ্রমিক। লাইনে গিয়ে তারা শুনেন মাত্র তিনদিনের মজুরি দেওয়া হবে। তাই তারা সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করে মজুরি না নিয়ে পাতা জমা দিয়ে যে যার বাড়ি চলে যান। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে সিলেটের চা-বাগান গুলোতে।
চলতি সপ্তাহসহ এগারো সপ্তাহের মজুরি পাওনা সিলেটের লাক্কাতুড়া চা বাগানের শ্রমিকদের। স্বল্প মজুরি নিয়ে কাজ করে চা শিল্পকে টিকিয়ে রাখছেন এই চা শ্রমিকরা। কিন্তু এই স্বল্প মজুরিও তাদের নিয়মিত দেওয়া হয় না।
চা শ্রমিক মুক্তি লোহার বলেন, দশ সপ্তাহের মজুরি পাওনা। আমাদের বলা হইলো আজকে এ সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে। এখন পাতা জমা দিতে এসে শুনি মাত্র তিন দিনের বেতন দিবে বাবু। এই তিন দিনের বেতন নিয়ে আমরা কি করমু। পাতা যেন নষ্ট না হয় এইজন্য ঝড়বৃষ্টির সময়ও আমরা পাতা তুলি। এখন যদি বেতন না দেয় আমাদের পেটে খানি (খাবার, পানি) না থাকে আমরা কিভাবে কাজ করব।
আক্ষেপ করে চা শ্রমিক সুরবর্ণা নায়েক বলেন, এমনিতেই অল্প মজুরি দেওয়া হয় আমাদের। এই অল্প মজুরিও ঠিকমত দেওয়া হয় না। আমরা কিভাবে বাঁচবো। রোদে পুড়ে, মেঘে ভিজে আমরা কাজ করি পেটের জন্য, বাচ্চাকাচ্চার জন্য। এক সপ্তাহ কাজ করে তিন দিনের বেতন দেয় বাবুরা। এখন এই বেতন দিয়ে আমার বাচ্চাকাচ্চা পড়ালেখা করাবো না পেটে খানি দেব।
সারা দেশে চা বাগান আছে ১৬৮ টি। এর মধ্যে ১৩৪ চা বাগান আছে সিলেট বিভাগের মধ্যে। চা শিল্পে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত। এই শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। এককাপ চায়ের দাম বছরে বছরে বাড়লেও চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে না। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে বাংলাদেশে চা চাষ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি কেউ। তাই যুগযুগ ধরে এই চা জনগোষ্ঠী লড়ছেন দারিদ্র্যতার সাথে। বিভিন্ন সময় নামেমাত্র মজুরি বৃদ্ধি করা হলেও বাজারমূল্যের সাথে সেটা কখনোই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও এসব থেকে সবসময়ই বঞ্চিত চা শ্রমিকরা।
মজুরি বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে চা শ্রমিক রাধামনি খবরের কাগজকে বলেন, এখন একজন রাজমিস্ত্রির যুগালিও দিনে ৫০০ টাকা করে মজুরি পায়। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ে না। যে মজুরি দেওয়ার কথা সেটাও ঠিকমত দেওয়া হয় না। সারা বছরই মজুরি বকেয়া রাখে বাবুরা। আমরা যখন বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন করি তখন দুয়েক সপ্তাহের বেতন দিয়ে কাজে আনে। কিন্তু সবসমই তারা নানা অজুহাতে বেতন আটকিয়ে রাখে। দোকানদার আমারে বাকিতে জিনিসপাতি দেয় না। কারণ আমরা সঠিক সময়ে টাকা দিতে পারি না। আধাপেট খেয়ে কাজ করি আমরা।