- মে ১৩, ২০২৫
- শীর্ষ খবর
- 3

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জে তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি এবং নদী-নালা ও খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে অগভীর নলকূপে মিলছে না পানি। এতে জেলাজুড়ে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে।
জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক গ্রামের বাসিন্দা ঝর্ণা বেগম। দেখা গেলো পানির খোঁজে বের হয়েছেন তিনি। সঙ্গে কলস। এক কলস খাওয়ার পানির জন্য উৎস স্থানে যেতে তাকে পাড়ি দিতে হবে কয়েক কিলোমিটার পথ। তারপর মিলবে এক কলস পানি। যে পানি দিয়ে কোনোও রকমে তৃপ্তি মেটাবেন ঝর্ণা বেগমের পরিবারের সদস্যরা।
ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘পানি খেলে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। এজন্য অনেক দূরে গিয়ে পানি আনি। আমাদের এ কষ্টের শেষ কবে জানি না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের আসনে (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) পল্লী এলাকার মানুষের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহে ৩৪ কোটি টাকা ব্যায়ে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ফলে এই প্রকল্পের আওতায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সাড়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন হাজার ৩০০টি এবং জগন্নাথপুরে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই হাজার ৫০০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। তবে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার দুই বছরের মাথায় অকেজো হয়ে গেছে বেশিরভাগ টিউবওয়েল। যেগুলো সচল আছে, সেগুলোতে ঝিরিঝিরিয়ে পানি ওঠে।
শিমুলবাক গ্রামের বাসিন্দা হালাল মিয়া, ছবাব মিয়া ও এখলাস মিয়া বলেন, ‘সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান টিউবওয়েল স্থাপনের যে প্রকল্প নেন তাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। দুই উপজেলার নির্মিত নলকূপগুলো এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
শুধু এ দুই উপজেলা নয়; জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজারসহ মোট ১২ উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি অগভীর নলকূপগুলোর একই দশা। ফলে বিশুদ্ধ পানির জন্য এই অঞ্চলের মানুষদের ভরসা করতে হয় গভীর নলকূপের ওপর। তবে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য গভীর নলকূপ বসানো সামর্থ্যের বাইরে। তারা চান সরকারি সহায়তা।
সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার বাসিন্দা সাবানা বেগম জানান, শুঙ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পুকুর ও নদীর পানি ফুটিয়ে পান করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা কবরি বেগম বলেন, ‘এক ফোটা টিউবওয়েলের পানির জন্য আমাদের কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। অনেক সময় সেখানে গিয়েও পানি পাওয়া যায় না। পানির এই কষ্ট থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
মাইজবাড়ির বাসিন্দা রাকিবা বানু জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদীর পানি খেয়ে ছেলেমেয়েদের শরীরে নানা রোগ হচ্ছে। পানির সংকট থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ১২ উপজেলায় সরকারি পর্যায়ে অগভীর নলকূপ সচল রয়েছে ২৩ হাজার ৫৬৫টি। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে জেলায় লক্ষাধিক নলকূপ রয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ খালেদুল ইসলাম বলেন, জেলায় পানি সংকট দূর করতে এরইমধ্যে ১২ উপজেলায় পাঁচ হাজার সাবমার্সেবল পাম্প বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তা সম্পূর্ণ হবে। তখন পানির সংকট কেটে যাবে।