• মে ১৫, ২০২৫
  • শীর্ষ খবর
  • 3
পোস্টার নিয়ে তোলপাড় সিলেট

নিউজ ডেস্কঃ পঞ্চাশোর্ধ্ব আবদুল কাদির পেশায় চা দোকানি। সিলেট নগরীর শাহি ঈদগাহ এলাকায় রাতে রাজনৈতিক দলের পোস্টার সাঁটানো তার আরেক পেশা।

গতকাল বুধবার (১৪ মে) রাতে বিএনপির পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে তাকে আটক করেন সিলেট মহানগর ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী। পোস্টার সাঁটানো বন্ধ রেখে তাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। হতভম্ব কাদিরের ভাষ্য, ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আপলোড করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে সিলেটে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। পোস্টারে কী ছিল? এসব ছাপিয়ে এখন নিরীহ পোস্টার সাঁটানোওয়ালাকে মধ্যরাতে আটক করার ঘটনাটি বেশি আলোচিত হচ্ছে। ফেসবুকে ভিডিও দেখে ঘটনাটিকে সিলেট ছাত্রদলের ‘ফ্যাসিস্ট’ আচরণ বলে অনেকে মন্তব্য করছেন।

পোস্টারটি সিলেটের সন্তান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে নিয়ে। সিলেট-১ আসনে তাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা বলা ছিল। রঙিন পোস্টারের এক পাশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি। আরেক পাশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি। পোস্টারটির অর্ধেক অংশজুড়ে বড় করে ছবি রয়েছে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের।

সেখানে লেখা রয়েছে, ‘বাংলাদেশের অহংকার, সিলেটবাসীর গর্ব- ডা. জুবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১-এর সাংসদ হিসেবে, আমরা অবহেলিত বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই।’ তবে কারা তাকে এই আসনে দেখতে চান তা পোস্টারে উল্লেখ নেই। পোস্টারটি যতটা নগরীতে সাঁটানো হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

জানা গেছে, পোস্টার সাঁটানোওয়ালা আবদুল কাদিরকে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথাবার্তা নিয়ে গত বুধবার রাত সোয়া তিনটার দিকে ফেসবুকে দুটি ভিডিও আপলোড করা হয়। সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রনি পাল তার ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিও আপলোড করেন। এরপর আরও একটি ভিডিও তিনি আপলোড করেন।

প্রথম ভিডিওতে রনি পাল ক্যাপশন দেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী সিলেটের কৃতী সন্তান ডা. জুবাইদা রহমানের নাম ব্যবহার করে একটি কুচক্রী মহলের পোস্টার লাগানোর আদ্যোপান্ত’।

ভিডিওতে দেখা গেছে, পোস্টার সাঁটানো আবদুল কাদিরকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হচ্ছে। তাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বলা হচ্ছে, কারা এই পোস্টার তাকে দিয়েছে। কাদির অনেকটা হতভম্ব হয়ে প্রশ্নকারীর জবাব দিয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছিলেন।

ভিডিও ধারণকালের দুজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম সদ্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের কোনো পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে কেউ ধরা পড়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেছে ঘটনাটি ঠিক উল্টো। ঘটনা শেষে পোস্টার সাঁটানো কাদিরই আমাদের বলেছেন, এরা দেখি আওয়ামী লীগের চাইতে কড়া!’

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রনি পালের ভিডিও দুটির ভিউ প্রায় দেড় লাখ ছাড়ায়। ওই ভিডিও শেয়ারের পাশাপাশি স্ক্রিনশটও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তাতে একজন নিরীহ পোস্টার সাঁটানোওয়ালাকে আটক করার ভিডিও করা নিয়ে সমালোচনা বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি পোস্টারে আপত্তিকর কিছু না থাকায় এভাবে উপস্থাপনের নিন্দা করতে দেখা গেছে অনেককে।

মো. মামুন আল রশিদ নামের একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, ‘ভিডিওকারীকে ভিডিও করা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। ভিডিও করা দেখে মনে হচ্ছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিও নিষিদ্ধ হয়ে গেছে! এই পোস্টার লাগানোতে ওনার অপরাধ কী?’

তিনি আরও লেখেন, ‘মনে রাখবেন, মানুষ এই ফ্যাসিস্ট শক্তি পতন হওয়ার পর বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মানুষের উৎসাহ বেড়েছে, এমনকি এই পোস্টারে লেখা আছে সিলেটের অহংকার, জিয়া পরিবারের পুত্রবধূ, সিলেটের মেয়েকে সিলেট-১ আসনে দেখতে চাই। এখানে অপরাধ বলতে কিছু হচ্ছে বলে মনে করছি না! তাকে উৎসাহ দেওয়ার পরিবর্তে টর্চার করা সরাসরি জিয়া পরিবারের ওপর আঘাত আনা ছাড়া কিছু না! আমি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ভিডিওকারীর উৎসাহদাতাদের চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে পোস্টার সাঁটানোওয়ালাকে বাধা দেওয়া ও ভিডিও ধারণকারী সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রনি পালের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। ফেসবুক-মেসেঞ্জারে নক করে সাড়া মেলেনি।

তবে এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভিডিওটি দেখেছি। এখানে পোস্টার লাগাতে রনি বাধা দিয়েছে, কারণ কার পক্ষ থেকে এই পোস্টার লাগানো হচ্ছে, সেটা এই পোস্টারে লেখা নেই। সাধারণত এ ধরনের পোস্টারে সৌজন্যে নাম ছবি দেওয়া থাকে। কিন্তু এই পোস্টারে এমন কিছু ছিল না। তাই তার মনে হয়েছে, কেউ হয়তো চক্রান্ত করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই পোস্টার লাগাচ্ছে। তাই রনি পোস্টার লাগাতে বাধা দিয়েছে।’

এভাবে নাম ও পরিচয়বিহীন পোস্টার সাঁটানোকে ‘ফ্যাসিস্ট’ দাবি করে ছাত্রদলের এই নেতা আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে আমরা লুকিয়ে ব্যানার-পোস্টার লাগাতাম। কিন্তু এখন তো ফ্যাসিস্ট নেই, তারপরও পরিচয় গোপন রেখে এ ধরনের পোস্টারিং করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হচ্ছে। এটা হয়তো দলের ভেতরের কেউ বা বাইরের কেউ করতে পারে। এই পোস্টার লাগিয়ে তারা দলের মধ্যে কোন্দল ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু সিলেট বিএনপির সব অঙ্গ সংগঠন এক। এখানে কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইলে আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করব।’

ডা. জুবাইদা রহমান প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন। তার ফেরার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সরব হওয়া নিয়ে আলোচনা রয়েছে। সিলেটের সন্তান হওয়ায় এ আলোচনা সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি চলছে। দলের একটি সূত্র জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে গিয়ে সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের প্রার্থিতা নিয়ে কথা বলায় বিষয়টি আলোচনায় আসে।

সিলেট-১ আসনে ডা. জুবাইদা রহমানকে দেখতে চাওয়ার পোস্টারটি সেই আলোচনা থেকে এসেছে কি না, জানতে চাইলে সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আলোচনা থাকা তো স্বাভাবিক। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে সবাইকে থাকতে হবে। পোস্টারে তো আপত্তিকর কিছু ছিল না, তবে বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনার কী হয়েছে? যে কেউ তার অভিপ্রায় প্রকাশ করতেই পারেন। পোস্টার লাগানোর কাজে নিয়োজিত একজন নিরীহ ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে আটক করে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা ঠিক হয়নি। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াও নিন্দনীয়।’ সূত্র: খবরের কাগজ