• জুন ২০, ২০২৫
  • শীর্ষ খবর
  • 3
জগন্নাথপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ কাঁথা

জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কাঁথা। একসময় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবারের গৃহবধূ ও কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হতো গ্রামীণ কাঁথা। এই কাঁথায় তাদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হতো নানা নকশা। ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামীণ কাঁথা কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। লেপ, কম্বল ও দামি চাদরের কারণে গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোর গ্রামীণ কাঁথা সেলাইয়ের বাড়তি আয়ের উৎসটি এখন আর নেই।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে মিশে আছে প্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন সূচি শিল্প। সেইসঙ্গে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড। সুঁইয়ের ফোঁড়ে সুতা বুননের মাধ্যমে পল্লী নারীদের উপার্জন হতো ভালোই।

গ্রামের বিয়েতে কন্যার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হতো কাঁথা। এছাড়া শীতনিবারণের জন্য কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন গ্রামাঞ্চলের নারী ও কিশোরীরা। কিন্তু সেইদিন আর নেই। গ্রামের নারীদের আড্ডা আর খোশগল্পের ছলে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। পুরাতন শাড়ি, লুঙ্গি বা ওড়নার কাপড়ে রঙ-বেরঙের সুতা দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করা হতো কাঁথা। গ্রামের নারীরা মনের মাধুরী মেশানো অনুভূতিতে নান্দনিক রূপ আর বর্ণ বৈচিত্রে এই গ্রামীণ কাঁথা বুনন করতেন।

কালের বিবর্তনে আজ-কাল আর চোখে পড়ে না গ্রামীণ এ কাঁথা সেলাইয়ের দৃশ্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভাবী নারীরা সংসারের সব কাজ শেষে অবসরে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করতেন। প্রকারভেদে একটি কাঁথা সেলাই করতে ১০ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আর মজুরি হিসেবে মিলতো ৬শ’ হতে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।

নিজেদের সংসারে সচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের বায়না পূরণ ও লেখাপড়ার খরচ মেটাতে বেশ ভূমিকা রাখতো হাতে তৈরি এই কাঁথা।

উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কাঁথা সেলাইকারী আমেনা বেগম ও রেখা বেগম বলেন, আগে আমরা সবসময় নতুন বা পুরাতন কাপড় দিয়ে কাঁথা সেলাই করতাম। এখন দেশি-বিদেশি কম্বল, লেপ এসব আসায় কাঁথা সেলাইয়ের রীতি হারিয়ে গেছে। সংসারের কাজের ফাঁকে কাঁথা সেলাই করে আয়-রোজগার হতো, এখন তা আর হয় না। এখন মানুষ কাঁথা সেলাই করে নিতে চায় না। মানুষের বাড়িবাড়ি গিয়ে খুঁজে একটা কাঁথা নিয়ে এসে সেলাই করলে সামান্য টাকা পাই।

একই এলাকার শিক্ষার্থী জান্নাতুন খাতুন বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি কাঁথা সেলাইয়ের কাজ পেলে তা করি। সেই টাকা পড়াশোনার কাজে লাগাই।

সামাজিক সংগঠন ফেয়ার ফেস জগন্নাথপুরের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামীম আহমদ জানান, দরিদ্র পরিবারের নারীদের সংসারের বাড়তি আয় ছিল গ্রামীণ কাঁথা সেলাই। তবে যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই পেশা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে এই খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে হারানো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।