• জুলাই ১৪, ২০২৫
  • জাতীয়
  • 8
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে : মির্জা ফখরুল

নিউজ ডেস্কঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।

সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমান বৈঠক করে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন তখন থেকে তাদের মাথা বিগড়ে গেছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপস নেই। আমরা নির্বাচন চাই। যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। আমরা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে অনুরোধ করব, ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন। নেতাদের কাছে অনুরোধ করব- এমন কিছু হতে দেবেন না যাতে আমাদের গণতন্ত্রের শত্রুরা সুযোগ পেয়ে যায়। যারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলে, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলে তারা গণতন্ত্রের শত্রু, তারা এই দেশের মানুষের শত্রু।

তিনি বলেন, আমি ধিক্কার জানাতে চাই সেই সমস্ত তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের যারা তারেক রহমানকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় কথা বলছেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষায় কথা বলব না। এটা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের নেতাকে অশ্লীল কথা বললে তার মান ছোট হয় না। ছোট হয় তারা যারা অশ্লীল ভাষায় কথা বলে।

মিটফোর্ড এলাকায় সম্প্রতি প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এই খুনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে তার তদন্ত হতে হবে। যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা (নির্মম হত্যাকাণ্ড) যারা করছে তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, আমরা যেন কারও পাতানো ফাঁদে পা দেই। তারা চেষ্টা করছে আমাদের উত্তেজিত করে তাদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়ার জন্য, যাতে আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র চাই।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ওদের পরিকল্পনাটা অত্যন্ত ভয়াবহ যে, বাংলাদেশে আবার একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা, অস্থিরতা সৃষ্টি করা, বিভাজনের সৃষ্টি করা, বাংলাদেশকে আবার একটা জায়গায় নিয়ে আসা যেখানে গণতন্ত্র আবার তিরোহিত হবে। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বড় দল হিসেবে, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে, ১৬ বছর আমরা যে কষ্ট করেছি, আত্মত্যাগ করেছি…আমাদের দেশনেত্রীকে ছয় বছর অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে, আমাদের নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে…. আমরা জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা একসাথে হয়ে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করেছি।

তিনি বলেন, আবার ফ্যাসিস্টদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নয়, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই- কোনোদিন যেন ফ্যাসিজম এদেশে চালু হতে না পারে তার ব্যবস্থা আমরা করব। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ রাখব যে, ধৈর্য ধরে সমস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

‘ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি একটি জনপ্রিয় দল, এই দলকে দেশের জনগণ ভালোবাসে। এই দলকে সহজে জনগণের মন থেকে উঠিয়ে ফেলা যাবে না যত ষড়যন্ত্রই করেন।

তিনি বলেন, একটি কথা না বললেই নয়, এক লোক, এক লোকের দল… আমি নামটা তার বলতে চাই না। ওই লোকটি এবং তার দল, যারা বলছে, স্লোগান দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ গেছে যেই পথে বিএনপি যাবে সেই পথে। আরে বেটা এত সহজ নাকি এটা… এতোই সহজ। আমাদের কোথাও যাওয়ার রাস্তা নাই। এই বাংলাদেশ আমাদের স্থায়ী ঠিকানা। এই লোকটি এবং তার দল-বল বিএনপিকে এখন সহ্য করতে পারছে না কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠিক সহ্য করতেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে যখন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ওপরে হামলা করা হয়েছিল এই চরমোনাইয়ের পীর কোথায় ছিলেন? উনি কি মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন? দাঁড়ায় নাই। কে দাঁড়িয়েছে? বিএনপি দাঁড়িয়েছে।

জামায়াতে ইসলামের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা আব্বাস বলেন, আর একটি দল লম্বা-লম্বা কথা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা নেওয়া ছাড়া, হাদিয়া নেয়া ছাড়া কোনো কাজ নাই। কোন কোন গ্রুপের কাছ থেকে টাকা খান আমাদের জানা আছে… সব কিছুর হিসাব হবে।

তিনি আরও বলেন, গায়ের জোরে কথা বলেন। নিজের পায়ে জোর নাই। এরশাদের সময়ে এরশাদের কাঁধে ভর করেন, আওয়ামী লীগের সময়ে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেন, বিএনপির সময়ে বিএনপির কাঁধে ভর করেন… লম্বা লম্বা কথা বলেন। এখন বিএনপি ওদের একমাত্র মাথা ব্যথা…বিএনপিকে যদি শেষ করে দেওয়া যায় তাহলে ওনার রাজত্ব করতে পারবেন। তারা তারেক রহমানকে সহ্য করতে পারছে না। কোনো লাভ নাই তারেক রহমান তার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরেকটা আছে যে কী বলে বাংলাদেশ চিলড্রেন্স পার্টি… এই চিলড্রেন্স পার্টির অনেকে এখন তারেক রহমান সম্পর্কে কথা বলেন, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কথা বলেন। আরে ভাই তোমাদের দাদাও তো জিয়াউর রহমানকে চিনে… কী সমস্ত কথা বলে এরা। এখন এই সমস্ত লোকের কথা-বার্তা শুনে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নাই।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে লালচাঁদ সোহাগকে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়।

ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় পর্যন্ত মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। মিছিলটি বিজয় নগর দিয়ে প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুব দলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না প্রমুখ নেতারা ছিলেন।