- আগস্ট ১৭, ২০২৫
- শীর্ষ খবর
- 3

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে আরও ১১ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। এ সময় পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আরডিসি) আশিক মাহমুদ কবিরের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী এ অভিযান চালায়।
অভিযানকালে ধোপাগুল সংলগ্ন সালুটিকর ভাটা এলাকায় একটি ক্রাশার মিলের আঙিনায় মাটিচাপা অবস্থায় পাথরের সন্ধান পায়। জব্দকৃত পাথরের পরিমাণ ১১ হাজার ঘনফুট হতে পারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে, শনিবার ধোপাগুল এলাকার বসতবাড়ি ও ক্রাশার মিলে অভিযান চালিয়ে আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী।
লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানায় অভিযানিক দলের একটি সূত্র।
একইদিনে গোয়াইনঘাটের ফতেপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি এলাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ ঘনফুট সাদা পাথর জব্দ করা হয়।
শনিবার গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
এর আগে ১৩ আগস্ট থেকে লুট হওয়া সাদাপাথর উদ্ধারে নামে প্রশাসন। গত চার দিনে প্রায় চার লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় প্রায় দুই হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে খনিজ সম্পদ অধিদপ্তর। মামলার পর, শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজন।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই সাদাপাথর এলাকায় শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট।
প্রশাসনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও, লুট হওয়া পাথরের কোনো পরিসংখ্যান আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি প্রশাসন।
গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর, কালাইরাগসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পাথর পুনরায় সাদাপাথরে নিয়ে ফেলা হচ্ছে, সাংবাদিকদের এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই সাদাপাথর পর্যটন এলাকায় ব্যাপক লুটপাট শুরু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা, প্রশাসনের লোকজন এখানে জড়িত ছিলেন। ধলাই নদীর উৎসমুখে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ পাথর দিনের বেলা প্রকাশ্যে নৌকায় করে সরিয়ে নেওয়া হয়। শত শত নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পাথর পরিবহন করা হয়েছে, এমনকি নদীর তীরের বালিও উত্তোলন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে পাথরলুটে জড়িত স্থানীয় পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে যথাস্থানে প্রতিস্থাপন এবং লুটে জড়িতদের তালিকা আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের উপকণ্ঠ ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার জোনের বিভিন্ন স্থানে স্তরে স্তরে রাখা হয়েছে সাদাপাথর। খুব কম সংখ্যক পাথরের স্তূপ দৃশ্যমান রয়েছে। আর বেশিরভাগ সাদাপাথর রাখা হয়েছে মাটিচাপা দিয়ে। অনেকে বালু দিয়েও সাদা পাথর ঢেকে রেখেছেন। ঢেকে রাখার চেষ্টাকৃত অনেক পাথর আবার দৃশ্যমান।
স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি দুই উপদেষ্টার সিলেট সফরের পরে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে স্টোন ক্রাসারগুলোর বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যে কারণে লুটপাটকৃত পাথর ব্যবসায়ীরা কিনে আনলেও সেগুলো ভাঙাতে পারেননি। তাই অভিযানের ভয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের চিত্র দেখা গেছে। সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে বড় বড় পাথর চুরি হওয়া স্থানগুলোতে বিশালাকারের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত শত শত স্থান খোদাই করে পাথর লুট করা হয়েছে।
স্থানীয় সাদাপাথর এলাকার ব্যবসায়ীদের মতে, প্রায় ৮০ শতাংশ লুট করা হয়েছে। যে কারণে কমেছে পর্যটক। ওইদিন কালাইরাগ এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে স্তূপাকারে জব্দকৃত সাদাপাথর নৌকায় এনে ভোলাগঞ্জ ১০ নং সাদাপাথর এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে বেশিরভাগ পাথর ও বালু ছাতক হয়ে নদীপথে দেশের বিভিন্নস্থানে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাতকে সুরমা নদীর দুই তীরে মজুত করা হয় সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, ধলাই নদী, পিয়াইন নদী থেকে উত্তোলন করা বালু ও পাথর। আর এখান থেকেই ভলগেট, কার্গো দিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।