• আগস্ট ২২, ২০২৫
  • শীর্ষ খবর
  • 2
পাথর লুটকাণ্ডে নাম থাকা সিলেট এনসিপি নেতার ‘অঙ্গ ভরা আ.লীগ-সঙ্গ’!

নিউজ ডেস্কঃ নাজিম উদ্দিন সাহান। জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) সিলেট জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনায় আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশের নতুন এই রাজনৈতিক দল এনসিপির সিলেট কমিটি ঘোষণার পরই সাহানের নামটি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হয়। পেশায় ব্যাংকার সাহান জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ‘সাথী’ ছিলেন। এরপর রাজনীতিতে নয়, পেশার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোটারি ক্লাব নিয়ে সক্রিয়তা ছিল। পেশা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সক্রিয়তার মধ্যে এনসিপির পদে আসীন হওয়ায় তাকে নিয়ে চলছিল আলোচনা। সেই আলোচনায় যেন ঘি ঢেলে দিল সাদা পাথর লুটকাণ্ডে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) লুটেরা তালিকা। এ তালিকায় পাথর লুটপাটে জড়িত রাজনীতিবিদ হিসেবে নাজিম উদ্দিন সাহানের নাম রয়েছে। এরপর থেকে তাকে নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এনসিপি সিলেট ও মহানগর শাখা সংবাদ সম্মেলন করে দুদুকের তালিকার প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়ে জেলা ও মহানগর এনসিপি দুদকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সংগঠন সূত্র জানায়, এরপর থেকে নাজিম উদ্দিন সাহানকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। শুক্রবার (২২ আগস্ট) ফেসবুকে বিগত প্রায় ১৫ বছর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন নেতাদের সান্নিধ্যে থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার ছবি প্রকাশ হয়েছে। সাহানকে বলা হচ্ছে, ‘অঙ্গ ভরা আওয়ামী লীগসঙ্গ’! কেউ কেউ তাকে ‘গুপ্ত রাজনীতির হোতা’ও বলছেন।

এ ব্যাপারে নাজিম উদ্দিন সাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তার ঘনিষ্ট এনসিপি মহানগর শাখার এক নেতা বলেছেন, দুদকের তালিকায় জড়ানোর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর থেকে তাকে নিয়ে নতুন আলোচনায় সরব রাজনৈতিক অঙ্গন। এরমধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারাও রয়েছেন। এদের অধিকাংশ দেশের বাইরে থেকে এ প্রচারণা চালিয়েছেন।

এনসিপি সিলেট ও মহানগর শাখা সংবাদ সম্মেলন করে দুদুকের তালিকার প্রতিবাদ জানিয়েছে। এতে বক্তব্য রাখছেন নাজিম উদ্দিন সাহান। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ‘আল আমিন রহমান’ আইডি থেকে প্রথম একটি পোস্ট হয়। এতে সিলেটের সাবেক মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, একাধিকবার নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারের সঙ্গে এনসিপি নেতা নাজিম উদ্দিনের ছবি। স্ট্যাটাসে লেখা, ‘এনসিপির প্রধান গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিপতি!!!/ সিলেট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বকারী নাজিম উদ্দিন শাহান। সিলেট আওয়ামী লীগের এমন কোনো নেতা নাই, যাকে তেল মারেনাই। পাথরখেকো এই গুপ্ত জামাতের কাজ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে ছবি তুলে নিজেকে নিরাপদে রাখা। শাহানরা দুই ভাই। বড় ভাই রেহান উদ্দিন রায়হান বাদেপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। পৌর জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমির। সম্প্রতি জামায়াত গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রেহান উদ্দিনকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়েছে।’ এ পোস্টটি অসংখ্য শেয়ার হয়েছে, কমেন্টে আছে নানা মন্তব্য। এর একটি মন্তব্য এমন, ‘অঙ্গ ভরা আওয়ামী লীগ-সঙ্গ’!

এ বিষয়ে এনসিপি নেতা নাজিম উদ্দিন সাহানের ঘনিষ্ট এনসিপির এক নেতা বলেন, ‘সাহান ভাই শিবির করতেন এটা সত্য। তার ভাই জামায়াত করেন। তবে তিনি ব্যাংকার পেশায় থেকে রোটারি ক্লাব করতেন। এ জন্য কেবল আওয়ামী লীগ নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ছবি আছে। এসব ছবি এখন ছাড়ানো হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ২০ আগস্ট একটি গণমাধ্যমে দুদকের তালিকা প্রকাশ হয়। এতে সাদা পাথর লুটে ৪২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এতে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম, জেলার সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন ও এনসিপির জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন সাহান ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদিক খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর নাম রয়েছে।

দুদকের এ তালিকা ভিত্তিহীন দাবি করে ওই দিনই সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে জামায়াতও সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানায়। সর্বশেষ এনসিপি সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার।

দুদকের তালিকাকে ‘কথিত রেফারেন্স’ উল্লেখ করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা বলে দাবি করে এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটি স্বচ্ছ ও জনমুখী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম, যার জন্ম ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই-এর গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। দুর্নীতিমুক্ত ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব গঠনের লক্ষ্যেই দলটি কাজ করছে। তারা কোনোভাবেই সাদা পাথর সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। এই পাথর সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যদি কোনো পক্ষ আমাদের জড়িত প্রমাণ করতে না পারে, তবে অবশ্যই তারা দুঃখ প্রকাশ করবে, অন্যথায় আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’

সাদা পাথর লুটকাণ্ডে নাম থাকাসহ আলোচনা-সমালোচনার বিষয়ে কথা হয় সিলেট বিভাগে এনসিপির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হকের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সার্বিক বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। শিগগির এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পদক্ষেপ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে।’

কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘আমরা রাজনীতির প্রচলিত সিস্টেম ভাঙতে চাই। নতুনভাবে পথপ্রদর্শক হয়ে এগোতে চাই। দুদক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের তদন্ত যাতে ব্যাহত না হয়, এ জন্য আমরা সময় নেব। ব্যক্তির দায় সংগঠন বহন করবে না। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান শুধু স্পষ্ট নয়, সুস্পষ্ট।’