• আগস্ট ২২, ২০২৫
  • জাতীয়
  • 1
শেখ হাসিনার বিচার হতেই হবে: মির্জা ফখরুল

নিউজ ডেস্কঃ বিগত আওয়ামী লীগের সময়ে হওয়া গুম-খুনের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার হতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আজ এটা প্রমাণিত যে শেখ হাসিনা এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। শেখ হাসিনা এসব গুমের জন্য দায়ী, তার বিচার অবশ্যই হতে হবে। এ দেশের মাটিতে হতে হবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গুমের ঘটনা নিয়ে ‘মানববন্ধন ও চিত্র প্রদর্শনী’র এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’।

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমাদের যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই গুম কমিশনকে পাবলিকলি নিয়ে আসার, পাবলিক শুনানি করার। তারা ব্যর্থ হয়েছে এই ইস্যুগুলো তাদের আত্মীয়দের, তাদের মায়েদের, তাদের ভাইদের যে কান্না- সেই কান্নাকে বন্ধ করতে। এ জন্য তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) অবশ্যই জবাবদিহি করতেই হবে।

তিনি বলেন, আমাদের একটা দাবি ছিল এসব ঘটনার বিচার করতে হবে। আমরা এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, এই বাচ্চাগুলোর সঙ্গে আমরা সারাক্ষণ আছি, তুলির (সানজিদা ইসলাম তুলি) মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণ আছি এবং আমরা শেষ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না এদের বিচার চূড়ান্ত হবে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকবো।

মির্জা ফখরুল বলেন, একটা কথা আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রথম দিন থেকে আমরা এই গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে আছি। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে আছি। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ছয় বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থেকেছেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত হয়েছিলেন, এখনো আছেন। আমরা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছি তাদের একজনও বাকি নেই যে যার বিরুদ্ধে একশ, দেড়শ, দুইশ, তিনশ, চারশ পর্যন্ত মামলা নেই এবং সে মামলাতে গ্রেফতার হইনি। তাই এ কথা ভাবা ভুল হবে যে বিএনপি এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাবে।

গুম-খুনের শিকার স্বজনদের কষ্টের বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, আন্দোলনে নামা অনেকেই গুম হয়ে গেলো! এক পরিবারের সাতজন পর্যন্তও গুম হলো। স্বজনহারা ছোট বাচ্চাদের দেখলে কষ্ট হয়, কারণ তাদের একসময় আরও ছোট অবস্থায় দেখেছিলাম। আজ তারা বড় হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচন অবশ্যই চায়, নির্বাচন চায় এই বিচারকে (গুমের ঘটনার) নিশ্চিত করার জন্য, বিচারগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আমাদের কাছে গুম বিষয়টা বই বা খবরের কাগজের একটা তথ্য ছিল। এই অনুষ্ঠানে একজন বললেন যে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে এটা হয়। আমাদের দেশে এটা (গুম) আগে ছিল না। এই প্রথম ভয়াবহ দানব হাসিনা সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই গুম এ দেশে নিয়ে এসেছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, আমাদের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে, ১৭০০ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত এসবের কোনো সদুত্তর পাইনি।

তিনি বলেন, আপনারা কেউ নিরাশ হবেন না। জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না, আজ পর্যন্ত হয়নি। এর প্রমাণ আপনারাই, আপনারাই আন্দোলন করে সেটাকে সফল করেছেন। আপনারাই দেখবেন, বিশেষ করে তরুণেরা, যুবকেরা, এই শিশুরা দেখবে তাদের পিতা, তাদের ভাইয়ের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে সেটার বিচার তারা দেখে যেতে পারবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশে গুমের ঘটনা তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় তাদের ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘মায়ের ডাক’- এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলি। এতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুম হওয়া পরিবারের সদস্য এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।