- সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
- শীর্ষ খবর
- 21

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসক নিয়ে কোনো রকমে চলছে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে। শূন্য রয়েছে সিনিয়র ও জুনিয়র কনলালটেন্ট গাইনী, কার্ডিওলজি, সার্জারি ও শিশু চিকিৎসকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। ৫৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে কাগজেপত্রে কর্মরত আছেন ২২ জন। কিন্তু বাস্তবে আছেন ২০ জন।
একজন ছুটি না নিয়েই দুই বছর পরিবার নিয়ে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। অপরজন প্রেষণে কর্মরত আছেন নরসিংদী হাসপাতালে। অথচ ৯শ’ থেকে ১২শ’ জন রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ২৫০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি থাকছেন ৪৫০ থেকে ৬০০ জন পর্যন্ত। এ অবস্থায় ডাক্তারদের আক্ষেপ আর রোগীদের ক্ষোভের শেষ নেই।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী সদর উপজেলার চরহামুয়া গ্রামের মো. দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমি নিজে রোগী। দুদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ডাক্তার এসে দেখে যাচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতালে কোথাও কোনো সিট নেই। আমি ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার মতো অসংখ্য রোগী ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের বারান্দায়ও জায়গা নেই।’
বৃদ্ধা মাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন কলি আক্তার নামে এক মহিলা। তিনি বলেন, ‘সদর হাসপাতালের অবস্থা একেবারে খারাপ। কোথাও সিট খালি নেই। মানুষ বারান্দায় এমনকি সিঁড়িতে পর্যন্ত পড়ে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ মানুষতো টাকা খরচ করতে কম করে না। হাসপাতালে কোনো ওষুধও নেই। ছোট একটি ক্যানোলা পর্যন্ত হাসপাতালে নেই। এটিও নিজে কিনে আনতে হয়। একজন শিশু নিয়ে এলে আধমরা হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ আসে ভালো করতে। শুধু বিপদে পরে এখানে আসতে হয়।’
জয়নাল মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আমার মাকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন মনে হচ্ছে মা মরে গেলেইতো শেষ। আর হাসপাতালে আসতে হবে না। এতো মানুষ বারান্দায় পড়ে চিকিৎসা নিচ্ছে, এতো গরম, একটি ফ্যানও নেই। জেলার এতো বড় একটি হাসপাতালে যদি সুযোগ সুবিধা না থাকে তবে মানুষ যাবে কোথায়। আমরা শুধু বলেই যাই, কিন্তু কোনো ফল পাই না। তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় এ হাসপাতালতো কিছুই না। জায়গা নাই, সুযোগ সুবিধা নাই। শুধু বড় বড় বুলি আওরানী শুনেছি আমরা। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন মেডিকেল অফিসার ডা. সঞ্চিতা মণ্ডল।’
তিনি বলেন, ‘এ ওয়ার্ডে বিছানা আছে ৫৯টি। কিন্তু দৈনিক রোগী ভর্তি থাকে ১৫০ থেকে ২০০ জন। এখানে আমরা দুজন মেডিকেল অফিসার এসব রোগী দেখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিশু রোগের কোনো চিকিৎসক নেই। এ দায়িত্ব আমরাই পালন করছি। অথচ ২০০ জন রোগী দেখতে ৮-১০ জন ডাক্তারের প্রয়োজন। সিট সংকুলান করা যাচ্ছে না। বহুমুখী সমস্যায় আমরা আছি।’
হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসক প্রয়োজন ৫৭ জন। কর্মরত আছেন ২০ জন। শূন্য আছে ৩৭ জনের পদ। এরমধ্যে কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ছাড়া অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। শুধু মেডিসিন ব্যতীত সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, কার্ডিওলজি, সার্জারি, শিশুসহ সবগুলো পদ শূন্য আছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট পদেও একই অবস্থা। মেডিকেল অফিসার ১৪ জনের মধ্যে আছেন সাতজন।
এরমধ্যে মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদী হাসান দুই বছর আগে ছুটি না নিয়ে পরিবার নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। মেডিকেল অফিসার ডা. রাম চন্দ্র দাস প্রেষণে নরসিংদীতে কর্মরত আছেন। প্রশাসনিক, হিসাবরক্ষণসহ অধিকাংশ কর্মকর্তার পদ শূন্য। নার্স, কর্মচারী সংকট থাকলেও তা অপ্রতুল নয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার বলেন, ‘জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা স্থল হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল। আমাদের এ হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা কম। ৫৭ জনের স্থলে আমিসহ মাত্র ২০ জন কর্মরত আছি। এতো অল্প জনবল নিয়ে আসলে হাসপাতালে সার্ভিস দেওয়া আমাদের খুবই কষ্ট হয়। এ হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ থেকে ৬০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। অথচ এটি শয্যা সংখ্যা মাত্র ২৫০টি।’
তিনি বলেন, ‘বহিঃবিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন ৯০০ থেকে ১২০০ জন। এ বিশাল রোগী চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যদি আমাদের ডাক্তারের সংখ্যা কিছু বাড়ানো হতো তাহলে আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো। সিনিয়র স্টাফ নার্স কয়েকদিনের মধ্যে নিয়োগ হবে। আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়ে কোনো রকমে চলা যায়। কিন্তু ডাক্তার সংকটতো অন্য কোনোভাবে মেটানো সম্ভব নয়। এটি আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন।’