• অক্টোবর ২, ২০২৫
  • আন্তর্জাতিক
  • 2
গাজামুখী ফ্লোটিলা থেকে আটকদের কঠোর কারাগারে রাখতে পারে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌকা থেকে বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণকারীদের আটক করেছে ইসরায়েলি কমান্ডোরা। এরই মধ্যে তাদেরকে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে- আটকৃতদের কপালে কী ঘটতে যাচ্ছে? তাদেরকে কি আদৌ নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে নাকি কারাবন্দি করা হবে?

নিচে ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌকা নিয়ে গঠিত ফ্লোটিলায় থাকা সংসদ সদস্য, আইনজীবী ও কর্মীসহ প্রায় ৫০০ জনের জন্য সম্ভাব্য আইনি প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো:

‘কঠোর’ কারাগারে আটক রাখার আশঙ্কা

ইসরায়েলভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ও আইনি কেন্দ্র আদালার আইনি পরিচালক সুহাদ বিশারা জানান, আটক হওয়া ব্যক্তিদের দক্ষিণ ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে আনা হতে পারে। তিনি বলেন, আটকদের পরিচয় নিশ্চিত করার পর তাদের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর তাদের হেফাজতে নেওয়া হবে, সম্ভবত দক্ষিণ ইসরায়েলের কেতসিওত কারাগারে।

প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ওমর শ্যাটজ বলেন, আগেরবার ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া আটক ব্যক্তিদের যেসব কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল, তার তুলনায় কেতসিওত একটি উচ্চ নিরাপত্তার কারাগার। সাধারণত সেখানে অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট বন্দিদের রাখা হয় না।

তিনি মনে করেন, ৫০০ জনকে একসঙ্গে প্রক্রিয়াজাত করা ইসরায়েলের জন্য লজিস্টিকভাবে কঠিন হবে বলেই হয়তো তাদের সেখানে রাখা হতে পারে। শ্যাটজ কেতসিওতর পরিবেশকে ‘কঠোর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

পুনরায় অংশ নেওয়াদের নিয়ে প্রশ্ন

আদালা আগের এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফ্লোটিলায় বারবার অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের রেকর্ড রাখলেও তাদের সাধারণত প্রথমবার অংশগ্রহণকারীদের মতোই স্বল্পমেয়াদি আটক ও বহিষ্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সম্প্রতি ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরসহ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রস্তাব দিয়েছেন যে, ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়াদের দীর্ঘমেয়াদি আটক রাখা উচিত।

সংস্থাটি বলেছে, আগের ফ্লোটিলার তুলনায় এবার অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আরও কঠোর আচরণ করার বাস্তব আশঙ্কা রয়েছে।

আগের প্রচেষ্টাগুলোতে কী হয়েছিল?

আগের মতো এবারও আটক হওয়া কর্মীদের ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ও সেখান থেকে তাদেরকে স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এই ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া কয়েকজন, যেমন সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, পূর্বেও অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করার সময় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হয়েছিলেন। তাদেরকে অপরাধমূলক বিচারের আওতায় আনা হয়নি; বরং বিষয়টি অভিবাসন সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

গত জুনে থুনবার্গের ফ্লোটিলা আটক হওয়ার পর তিনি ও আরও তিনজন কর্মী ফেরত যেতে রাজি হয়েছিলেন। এতে আপিল করার কোনো সুযোগ ছিল না এবং তাদেরকে ইসরায়েল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বের করে দেওয়া হয়।

তবে ফরাসি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসানসহ আটজন কর্মী ওই কাগজে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের যুক্তি ছিল, তারা ইসরায়েলে প্রবেশ করতে চাননি; বরং জোর করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে তেল আভিভ বিমানবন্দরের কাছে আটক রাখা হয়।

একটি এনজিও জানিয়েছে, রিমা হাসানকে স্বল্প সময়ের জন্য নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল। পরে একটি ট্রাইব্যুনাল তাদের ফেরত পাঠানোর আদেশ বহাল রাখে। আইনজীবীদের মতে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তাদের অন্তত ১০০ বছরের জন্য ইসরায়েলে প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়।

ফেরত পাঠানোর আগে সনাক্তকরণ ও প্রক্রিয়া

ইসরায়েলভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ও আইনি কেন্দ্র আদালা অতীতে আটক ফ্লোটিলা অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে কাজ করেছে। সংস্থাটির আইনি পরিচালক সুহাদ বিশারা বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রয়টার্সকে জানান, তারা আটক হওয়া ব্যক্তিদের দক্ষিণ ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে আনার অপেক্ষায় আছেন।

তিনি বলেন, নাবিকদের পরিচয় নিশ্চিত করার পর তাদের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর তাদের হেফাজতে নেওয়া হবে, সম্ভবত দক্ষিণ ইসরায়েলের কেতসিওত কারাগারে।

বিশারা বলেন, আমাদের মূল উদ্বেগ হলো তাদের সুস্থতা, স্বাস্থ্য এবং এ নিশ্চয়তা দেওয়া যে তারা অভিবাসন ট্রাইব্যুনালের শুনানির আগে ও কারাগারে থাকার সময় যথাযথ আইনি পরামর্শ পাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, ফ্লোটিলাকে নৌবাহিনী সতর্ক করেছিল যে তারা সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং একটি ‘বৈধ নৌ অবরোধ’ ভঙ্গ করছে। আয়োজকদের পথ পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয় এবং গাজায় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।