- নভেম্বর ১, ২০২৫
- শীর্ষ খবর
- 1
নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে নিজ বাসার ছাদে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক হত্যা মামলায় তাঁর ছেলে আসাদ আহমদের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। তবে নিহতের পরিবার মামলার বাদী হতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে এবং আসাদ আহমদকে প্রধান আসামিসহ পরিবারের আরও দুই সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার সকালে দক্ষিণ সুরমার নিজ বাসার ছাদ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই রাজ্জাকের ছেলে আসাদ আহমদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হয়। তবে আসাদ বা পরিবারের কেউই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
তারা মামলা করতেও অস্বীকৃতি জানানোর পর পুলিশ বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে আসাদকে গ্রেফতার দেখিয়ে রবিবার আদালতে হাজির করা হবে। পুলিশ আসাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং রিমান্ড শুনানির তারিখ পরবর্তীতে নির্ধারণের নির্দেশ দেন।
পুলিশের ধারণা, সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
মহানগর পুলিশের এডিসি (গণমাধ্যম) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আসাদকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।’
তবে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের বক্তব্য মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর তাঁর মানসিক অবস্থা আরও অবনতি ঘটে। তিনি ভারতের চিকিৎসকদের কাছেও চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরিবারের ভাষ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তাঁরা ছাদে গিয়ে রাজ্জাকের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।
তাঁরা আরও জানান, সিসিটিভি ফুটেজে কাউকে বাড়িতে প্রবেশ বা বের হতে দেখা যায়নি, এমনকি বাড়ির ফটকও ছিল তালাবদ্ধ।
কিন্তু পুলিশ এ যুক্তি গ্রহণ করেনি। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, ঘটনাস্থলের আলামত ও শারীরিক আঘাতের চিহ্ন দেখে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্পষ্ট। সম্পত্তি বিরোধসহ একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত চলছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আব্দুর রাজ্জাক প্রতিদিনের মতো ছাদে হাঁটতে যান, এবং সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে নয়টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। তাঁর বুক, পেট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ঘটনার পর শুক্রবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। পুলিশ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না।’
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে। আওয়ামী লীগ নেতার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার, প্রতিবেশী ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের মধ্যে নেমে এসেছে নীরবতা।
পুলিশ বলছে, তদন্তে হত্যার কারণ, ব্যবহৃত অস্ত্র ও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, নিহত আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের তেলিরাই গ্রামের প্রয়াত মৌলুল হোসেনের ছেলে।
