• নভেম্বর ৭, ২০২৫
  • আন্তর্জাতিক
  • 3
‘চিকেনস নেক’ এর সুরক্ষায় বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন ৩ সামরিক ঘাঁটি বানাচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর বা “চিকেনস নেক” এলাকাকে সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন তিনটি নতুন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লিভিত্তিক গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো।

সূত্রগুলোর মতে, নতুন ঘাঁটিগুলো স্থাপন করা হয়েছে আসামের ধুবরি জেলার বামুনি, বিহারের কিশনগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের চোপড়া এলাকায়—যেগুলো বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তের খুব কাছেই অবস্থিত।

ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি একটি বৃহত্তর সামরিক কৌশলের অংশ, যার উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো, কৌশলগত দুর্বলতা মোকাবিলা করা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা উন্নত করা।

শিলিগুড়ি করিডোরটি উত্তরবঙ্গের একটি সরু ভূখণ্ড, যার প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে। এর চারপাশে রয়েছে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও চীন—যা এই অঞ্চলটিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকায় পরিণত করেছে।

ইন্ডিয়া টুডে–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আঞ্চলিক পরিবর্তনগুলোকে ঘিরে ভারতীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনাকারীরা আরও সতর্ক হয়ে উঠেছেন।

নয়াদিল্লির বিশ্লেষকরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা—যা দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির নতুন সমীকরণ গঠনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরকেন্দ্রিক নিরাপত্তা হিসাবেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

তবে ভারতের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা এই অঞ্চলের দুর্বলতা সম্পর্কিত আশঙ্কা নাকচ করে বলেছেন, শিলিগুড়ি অঞ্চল “দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাগুলোর একটি।” তাদের ভাষায়, নবনির্মিত ঘাঁটিগুলো সেনা মোতায়েন, লজিস্টিকস এবং গোয়েন্দা সমন্বয় আরও শক্তিশালী করবে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩৩তম কোর, যার সদর দপ্তর পশ্চিমবঙ্গের সুখনায়, শিলিগুড়ি করিডোরের প্রতিরক্ষা তত্ত্বাবধান করে। এই কোর নিয়মিতভাবে লাইভ-ফায়ার ও মোবিলিটি মহড়া পরিচালনা করে, যেখানে টি-৯০ ট্যাঙ্কসহ আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়।

ভারতের এ অঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ করছে পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা বিমানঘাঁটিতে অবস্থানরত রাফায়েল যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন। এগুলোর সহায়তায় রয়েছে মিগ যুদ্ধবিমান ইউনিট এবং আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতাসম্পন্ন ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্ট।

এছাড়া অঞ্চলটিকে সুরক্ষায় ভারত মোতায়েন রেখেছে বহুস্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেখানে রয়েছে রুশ এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম, ভারত-ইসরায়েল যৌথভাবে নির্মিত এমআরএসএএম ইউনিট এবং দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্ম। এসব ব্যবস্থা আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে ওভারল্যাপিং প্রতিরক্ষা তৈরি করে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এস-৪০০ সিস্টেম মূলত পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে সম্ভাব্য শত্রু অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছে, বিশেষ করে চীন সীমান্ত বরাবর।

সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৮,১৬০ কোটি রুপি (প্রায় ৯৮০ মিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে উন্নত প্রযুক্তির দুটি নতুন আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্ট কেনার অনুমোদন দিয়েছে। নতুন এই ‘আকাশ’ সিস্টেম ৩৬০ ডিগ্রি কাভারেজ এবং উন্নত ‘সিকার’ প্রযুক্তি সম্বলিত, যা নির্ভুল লক্ষ্যভেদে সক্ষম। সূত্র: ডেইলি অবজার্ভার