• নভেম্বর ২৮, ২০২৫
  • শীর্ষ খবর
  • 2
সিলেট-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বঞ্চিত নেতাদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হচ্ছে

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বঞ্চিত নেতাদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিনিধি পাঠিয়ে ও সরাসরি ফোন করে ঐক্যের ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রার্থী রিভিউর দাবি থেকে সরতে নারাজ বঞ্চিতরা। এর ফলে অস্বস্তিতে মনোনয়ন পাওয়া এমএ মালিক। তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা।

এরই মধ্যে এমএ মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও প্রবাসী ব্যারিস্টার এমএ সালাম বলেছেন, ‘দল মনোনীত প্রার্থীর (এমএ মালিক) সমর্থকরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পদ-পদবি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এটা সরাসরি দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রতি চ্যালেঞ্জ। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেল খেটেছে বা মামলার শিকার হয়েছেন। তারা এখন নিজেদের দলের ভেতর থেকেই হুমকির মুখে পড়েছেন।’

এ ব্যাপারে দল মনোনীত প্রার্থী এমএ মালিকের বক্তব্য হলো-‘এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। বিষয়টি দল দেখবে।’

এদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে চলমান অস্থিরতা বিষয়ে মাঠের নেতারা বলছেন অন্য কথা। তারা যুগান্তরকে বলেন, ‘মনোনয়ন বিতর্কের মূল কারণ হলো- দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় থাকা নেতাদের বাদ দিয়ে প্রবাসীকে মনোনয়ন। ১৯ বছর দেশে আসেননি এমএ মালিক। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর ব্যারিস্টার সালামও প্রবাসী। এদের কারণে গত সরকারের আমলে মাঠের নিপীড়ন-নির্যাতনে ধকল সয়ে থাকা নেতাকর্মীরা বঞ্চনার শিকার। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও আরেক ত্যাগী নেতা আব্দুল আহাদ খান জামাল নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। কিন্তু তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।

তবে মালিকের অনুসারীদের দাবি, ‘তিনি (মালিক) দেশে না থাকলেও বিদেশে বিএনপির জন্য অবিরাম খেটেছেন।’ আর সালামের অনুসারীদের দাবি, ‘তিনি (সালাম) এলাকায় শিক্ষা, ক্রীড়া ও সমাজসেবায় কাজ করে চলেছেন।’

সিলেট-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মোট পাঁচজন। এমএ মালিক মনোনয়ন পেলেও বঞ্চিত হন ব্যারিস্টার এমএ সালাম, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল এবং নগর বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান। প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূলে প্রার্থী রিভিউর দাবি ওঠে। মালিক মনোনয়ন পাওয়ার পরই ছুটে যান আব্দুল আহাদ খান জামালের কাছে। তিনিও সমর্থন দিয়ে মালিকের সঙ্গে আছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ হকের ছেলে ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনানও দলের প্রার্থী ঘোষণার পর অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এখন মাঠে ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম ও আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী আছেন।

প্রার্থী ঘোষণার পর মাঠে বিশাল শোডাউন করেন কাইয়ুম চৌধুরী। ব্যারিস্টার সালামের অনুসারীরাও শোডাউন করে যাচ্ছেন। রোববার রাতে সিলেট শহরতলির সিলাম ইউনিয়নের এক সমাবেশে সালাম বলেন, ‘নেতাকর্মীদের পদ-পদবি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন দল মনোনীত মালিকের বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে একজনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এটা দলের প্রসিডিউর, এক হাজারবার মেনে নিচ্ছি। মেনে নিতে হবে। এটাই দল। কিন্তু দলের কর্মীদের নিয়ে বলা হচ্ছে তোমাদের পদ থাকবে না। এটা হবে না, ওটা হবে না। তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া, লাঠি দেখানো হচ্ছে। এটার জন্য কি রাজনীতি! অমুককে সমর্থন করতেই হবে? সাবধান, তৃণমূলকে বিভক্ত করবেন না।

সম্প্রতি কাইয়ুম ও সালামকে টেক্কা দিতে দক্ষিণ সুরমায় বিশাল শোডাউন করেন মনোনয়ন পাওয়া মালিক। সেই শোডাউন নিয়েও নানা কথা সালাম ও কাইয়ুমের অনুসারীদের মুখে। তাদের দাবি, নিজ আসনের লোকজন না পেয়ে অন্য আসন থেকে ভাড়াটে লোক দিয়ে শোডাউন করেছেন মালিক।

অপরদিকে দলের ত্যাগী নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের মনোনয়নের অধিকার থাকলেও ভোট ও বিজয়ের জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপরই নির্ভর করতে হবে। তাই তৃণমূলকে না খেপিয়ে তাদের সন্তুষ্টির পথেই হাঁটতে হবে কেন্দ্রকে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর