• ডিসেম্বর ৪, ২০২৫
  • রাজনীতি
  • 3
সিলেটে ১৯ আসনের মধ্যে ছয়টি ছাড়তে পারে জামায়াত

নিউজ ডেস্কঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য আসন সমঝোতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতুহল বাড়ছে। তবে এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।

দলীয় সূত্র বলছে, বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যের অংশ হিসেবে ৩০০ সংসদীয় আসনের একটি বড় অংশ শরিক ও সমমনা দলগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার নীতিগত প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট বিভাগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন নিয়ে চলছে আলোচনা, অভ্যন্তরীণ জরিপ ও কৌশলগত হিসাব-নিকাশ।

এরইমধ্যে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসন ছাড় দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। এ নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনাও চলছে। যেসব আসনে সমমনা ইসলামি দলের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বা অবস্থান শক্তিশালী, সেসব আসন নিয়েই সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে জামায়াত।

এখন পর্যন্ত যে ছয়টি আসন ছাড় দেওয়ার গুঞ্জন বেশি রয়েছে সেগুলো হলো- সিলেট-২ (বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর), সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট), সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর), মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) ও হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ) ও হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ)। তাছাড়া গুঞ্জনের মধ্যেই হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি।

অবশ্য জামায়াতের দায়িত্বশীলরা বলছেন, ইসলামি সাতটি দলের সঙ্গে একটি বৃহত্তর নির্বাচনি সমঝোতায় পৌঁছার আলোচনা শেষ পর্যায়ে চলছে। সেই সমঝোতায় আরও রাজনৈতিক দল বাড়তেও পারে। এটি একটি চমক। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। তখন জানিয়ে দেওয়া হবে জামায়াত কয়টি আসন ছাড় দেবে, আর এসব আসনে কাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে নিয়ে নির্বাচনি সমঝোতার আলোচনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট অবস্থান জানায়নি দলটি। এক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে দলটি। সমমনা সাতটি দলকে নিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর একধরনের চাপ বজায় রেখে নির্বাচনি কৌশল সাজাচ্ছে। একইসঙ্গে আসনভিত্তিক জরিপ চালাচ্ছে দলটি। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কোন আসন কে পাবে, কীভাবে সমঝোতা হবে, এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী ৭ বা ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। এরমধ্যে সম্ভব না হলে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতাকারী দলগুলোর মধ্যে সিলেট-২ আসনে কাজ করছেন জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। খেলাফত মজলিসের মুনতাসির আলীও নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিলেট-৫ আসনে জামায়াতের জেলার নায়েবে আমির মাওলানা আনোয়ার হোসেন খানের সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলনের মুফতি রেজাউল করিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার উপদেষ্টা আবুল হাসান ও ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী।

সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনে মাঠে রয়েছেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইয়াছিন খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের অপরাংশের নেতা (যুক্তরাজ্য প্রবাসী) হাফিজ মুশতাক আহমদ।

মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আব্দুর রব। এই আসনে বরুণার পীর আল্লামা শায়খ খলিলুর রহমান হামিদী (রহ.)-এর জ্যেষ্ঠ ছেলে নুরে আলম হামিদী নির্বাচন করতে পারেন। তিনি নির্বাচনে এলে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান আজমীর সঙ্গে মাঠে রয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির বানিয়াচংয়ের বড় হুজুর খ্যাত আব্দুল বাছিত আজাদ। এছাড়াও এই আসনে বিভিন্ন ইসলামি দলের প্রার্থীরা কাজ করছেন।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলটির জেলা সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদ কাজ করছেন। বিএনপি ছাড়াও এখানে মাঠে আছেন ইসলামী গণঅধিকার পরিষদ দলের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী হেলাল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলহাজ মহিব উদ্দিন আহমদ সোহেল।

তাছাড়া হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছিলেন জেলা জামায়াতের আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান। এই আসনে প্রার্থী ছাড় দেওয়ার গুঞ্জন ছিল। এই গুঞ্জনের মধ্যেই গত মঙ্গলবার সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে সমর্থন জানিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন জামায়াতের প্রার্থী মুখলিছুর রহমান।

এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ৩০০ আসনেই সমানভাবে কাজ চলছে। ইসলামি আট দলের সঙ্গে কেন্দ্রে আলোচনা হচ্ছে। সমঝোতা হলে আসন ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করবে দল। মাঠপর্যায়ে যার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, সেটিই দেখা হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো আসনে অন্য দলের প্রার্থী জনপ্রিয় হলে সেটিও বিবেচনায় আসতে পারে। এখনকার প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে; চূড়ান্ত ঘোষণার আগ পর্যন্ত সবাই কাজ করবেন। প্রার্থী পরিবর্তন হলে আগের প্রার্থী নতুন প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, সাতটি ইসলামী দলের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার আলোচনা শেষ পর্যায়ে। সমঝোতায় আরও দল যুক্ত হতেও পারে। আগামী ৭ ডিসেম্বর অথবা ৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। ওই দুইদিনের মধ্যে কোনো কারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না গেলে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন কয়টি আসন ছাড় দেওয়া হবে তা প্রকাশ করা হবে। সূত্র: জাগো নিউজ