- ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
- মৌলভীবাজার
- 1
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ বছরের পর বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে মৌলভীবাজার জেলার বধ্যভূমি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও কয়েকটি স্থানছাড়া সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়নি বধ্যভূমি। জেলার চিহ্নিত ২০ বধ্যভূমির ১২টি অরক্ষিত।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ ও নিরীহ মানুষদের ধরে এনে নির্মমভাবে গণহত্যা করে বিভিন্ন স্থানে মাটিচাপা দেয়। পরে এসব গণহত্যার স্থান চিহ্নিত করে কয়েকটি বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। তবে যেসব স্থানে বধ্যভূমি করা হয়েছে এসব স্থান বছরের পর বছর ঝোপজঙ্গলে ভরপুর থাকে। মাঝে মধ্যে বিজয় দিবসে পরিষ্কার করা হলেও সারাবছর অবহেলায় পড়ে থাকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় প্রায় ২০টি বধ্যভূমি আছে। এরমধ্যে মাত্র আটটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে এ সংরক্ষিত বধ্যভূমি গুলো সবসময় ঝোপজঙ্গলে ভরপুর থাকে।
সরেজমিনে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শমশেরনগর ইউনিয়নের শমশেরনগর বিমানবন্দর সংলগ্ন বধ্যভূমি, সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ, দেওড়া ছড়া বধ্যভূমি সরকারিভাবে স্থাপনা তৈরি করা হলেও বাহির থেকে বোঝার উপায় নেই এটা একটা বধ্যভূমি। যে কেউ দেখলে মনে হবে এটা একটা ভূতের বাড়ি। ঘন জঙ্গলে ভরপুর যা সুন্দরবনকেও হার মানাবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলার চিহ্নিত বাছাইকৃত বধ্যভূমি গুলো হচ্ছে কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বিমানবন্দর সংলগ্ন বধ্যভূমি, দেওড়া ছড়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া গণকবর, কুলাউড়া উপজেলার হাকাতির দিঘিরপারের গণকবর, কুলাউড়া রেলস্টেশনের দক্ষিণে রেললাইনের পূর্ব পাশের গণকবর, রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের হির নারায়ণ দাসের দিঘিরপারের গণকবর, বড়লেখা উপজেলার সায়পুর গণকবর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাড়ন্তি-নালিউড়ি সড়কের উত্তর পাশের গণকবর ও আপার কাগাবলা ইউপির নড়িয়া গ্রামের কামিনী দেবের বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বের গণকবরসহ বেশ কিছু বধ্যভূমি রয়েছে।
জেলার মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, বধ্যভূমি গুলো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নিদর্শন। এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা নির্বিচারে গণহত্যা করেছে। অথচ এই স্থান গুলো এখন গরু ছাগল ও মানুষের মল-মূত্র ত্যাগের জায়গা। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিজয় দিবসের আগে বধ্যভূমিগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হোক।
মুক্তিযোদ্ধা মনু মিয়া বলেন, পঙ্গুত্ব নিয়ে এখনও বেঁচে আছি। বয়স হয়েছে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছি। শমশেরনগর বধ্যভূমিতে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। দেওড়া ছড়ায় একসাথে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। অথচ এসব স্থান গুলো সংরক্ষণ করা হলেও কোনো কদর নেই। শুধু এ দুটি নয় সারাজেলায় অনেক গণকবর ও বধ্যভূমি আছে যার চিহ্ন এখন নেই।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসা. শাহীনা আক্তার বলেন, মৌলভীবাজার পৌরসভায় একটি বধ্যভূমি আছে যা বিজয় দিবসের আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলে দেওয়া হবে বধ্যভূমি গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য।
