• ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
  • শীর্ষ খবর
  • 1
শায়েস্তাগঞ্জে শিল্প দূষণ চরম আকার ধারণ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে শিল্প দূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। সদর উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো বৃহৎ ও মাঝারি কারখানা। নূরপুর, ওলিপুর, শাহজীবাজার, নোয়াপাড়া, ছাতিয়াইন, জগদীশপুর, অনেক এলাকাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নদীনালা ও খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়ছে বর্জ্য দূষণ।

বর্তমানে বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলাতেও কলকারখানা গড়ে উঠছে। এর দূষণে হবিগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় ২০টি ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিন ফসলি কৃষিজমিতেও কলকারখানা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে আসছে। যত্রতত্র কৃষিজমি, খাল, ছড়া এবং নদীসহ সকল প্রকার জীবন ও জীবিকা শিল্প দূষণের শিকার হয়েছে। এতে হাঁস-মোরগ, গৃহপালিত পশুর মৃত্যুসহ নানা রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। যা কৃষিজমি ধ্বংস, ফসলের ক্ষতি, নিরাপদ পরিবেশবিমুখ শিল্পায়ন দেশের উন্নয়ন নয় পানির অভাবসহ ক্রমাগত দূষণের ফলে চরম পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।

কোম্পানির বর্জ্য নিক্ষেপে হবিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সুতাং নদী, সোনাই নদী, খড়খির খাল, ইক্তিয়ারপুর খাল, শৈলজুড়া খাল, বেজুরা খাল, হাওর হয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বলভদ্র, কানাই, বাগাদা ও খাষ্টি নদী স্পর্শ করে লাখাই উপজেলার কাছে মেঘনা নদী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে আসছে। যা পুরো দেশে পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। এসব এলাকায় দূষণের তীব্র দুর্গন্ধ, কালো ও দূষিত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লোকজন দুর্গন্ধময় ও দূষিত পানির সঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন মারাত্মক চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ জটিল রোগে। আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে ধানসহ ফসল উৎপাদন। দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে নদী, খাল-বিলগুলো প্রায় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার নামে শৈলজুরা নামক খালটি জেলা প্রশাসন পুনঃখনন করে কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত করে দেয় ২০১৪/১৫ সালে। ফলে কোম্পানিরগুলোর বর্জ্য সহজেই খালের মাধ্যমে সুতাং নদীতে ছাড়া হচ্ছে। এ কারণে শিল্পবর্জ্য দূষণে সুতাং নদীর পানি অসহনীয় দুর্গন্ধ ও কালো কুচকুচে হয়ে পড়েছে। নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন বিপাকে।

চলমান বেপরোয়া ও অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয়ের কথা একাধিকবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে পরিকল্পিত ও উৎসে বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসলেও এ অঞ্চলের মাটি, পানি, বায়ু, শব্দদূষণ থেকে বিরত রাখতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল দপ্তরের কোনো প্রক্রিয়া চোখে পড়ছে না।

দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের নির্লিপ্ততা ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা একাধিকবার শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই দুর্যোগের কথা জানালেও তাতে দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি আজও। পরিবেশবিমুখ শিল্পায়ন দেশের উন্নয়ন নয়, বরং ধ্বংস ডেকে আনছে। অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে ব্যাপক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। কৃষিজমিতে শিল্পকারখানা স্থাপন বন্ধ ও স্থাপিত কারখানাগুলোর ছড়িয়ে পড়া বর্জ্যের দূষণের প্রতিরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে দূষণের মাত্রা আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই হবিগঞ্জে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলের ছড়িয়ে পড়া বর্জ্যের দূষণের প্রতিরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।