- আগস্ট ২৪, ২০২২
- লিড নিউস
- 243
হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে থাকা চা-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তার দাবি জানানো হয়েছে। বরাবর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আসা এই পেশাজীবীদের এক নেতা সরকারপ্রধানকে মা সম্বোধন করে অবিলম্বে তার বক্তব্য দাবি করেছেন।
সন্ধ্যা রাণী নামে ওই নেতা বুধবার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘আমরা সব সময় নৌকায় ভোট দেই। আর আমাদের মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে একটা ভিডিও বার্তা দিতে পারেন না?
‘ডিসি-এসপি চিনি না, আমাদেরকে ৩০০ টাকা মজুরি দাও আমরা কাজে ফিরে যাব। না হলে আমরা বাগানে কাজে যাব না। প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজে চলে যাব।’
চা-শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে সম্প্রতি মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।
ঢাকায় সমঝোতার সেই বৈঠকে বাগান মালিকরা মজুরি ২০ টাকা বাড়াতে চেয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ জানান, প্রধানমন্ত্রী আরও ৫ টাকা বাড়াতে বলেছেন।
আর আপাতত এই মজুরি দেয়া হবে। সেপ্টেম্বরে ভারত সফর থেকে ফিরে শেখ হাসিনা চা-শ্রমিকদের সঙ্গে বসে মজুরি চূড়ান্ত করবেন।
এ নিয়ে নানা ঘটনার পর শ্রমিকদের একাংশ পুরোনো মজুরি ১২০ টাকাতেই কাজ করার ঘোষণা দিয়ে বাগানে ফেরেন। তারা শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছেন, যাকে বছরের পর বছর ধরে তারা ভোট দিয়ে এসেছেন।
তবে একটি বড় অংশই কাজে ফেরেননি এখনও। প্রতিদিনই সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বুধবার হবিগঞ্জে বৈঠক শেষে বেগম খান চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি চন্দ্র কর্মকার বৈঠক শেষে বলেন, ‘আমরা বাগানে কাজে যাব মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) কথায়, মাসির (অন্য কারও) কথায় কাজে যাব না।’
চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধরে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পঞ্চায়েত নেতাদের বৈঠক চলে। এতে লস্করপুর ভ্যালির ২৪টি চা বাগানের শ্রমিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
শ্রমিকদের পক্ষে চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘আমরা বারবার একই কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মা। মা যদি ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যেতে বলেন, তাহলেও আমরা কাজে যাব। কোনো ডিসি-এসপির কথায় আমরা কাজে যাব না।’
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান শ্রমিক নেতাদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দুর্গাপূজার পর আপনাদের মজুরির বিষয়টি দেখবেন। তাই আপাতত আপনারা কাজে ফিরে যান।
‘আপনারা কাজে ফিরে গেলে আপনারে সব সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে আমি দেখব। আপনারা যাতে কোনো বিষয়ে বঞ্চিত না হন তার ব্যবস্থা আমি নেব।’
চা শ্রমিক নারী সংগঠনের সভাপতি খায়রুন আক্তার বলেন, ‘আমাদের নেতারা বিক্রি হয়ে গেছে। তারা সকালে এক কথা কয়, বিকেলে আরেক কথা কয়।
‘আমরা তাদের কথা আর শুনি না। যতদিন পর্যন্ত ৩০০ টাকা মজুরি দিবে না, ততদিন কেউ কাজে যাবে না।’
বুধবার ১৬তম দিনের মতো চলছে চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতি। তাদের দাবি, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা।
এই দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৬ চা বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। সেদিন থেকে ৪ দিন পর্যন্ত ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন।
এরপর গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এর মধ্যে কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও তা সমাধান হয়নি।