- সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
- রাজনীতি
- 220
নিউজ ডেস্কঃ বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, পুলিশ প্রশাসন যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, সেটা এখন একটা বড় প্রশ্ন।
আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ আয়োজিত ‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্র ও গণমানুষের অধিকার আদায়ে বিশ্বাস করেনি। বিএনপির দুর্ভাগ্য, আওয়ামী লীগের মতো একটি একদলীয় সরকারে বিশ্বাস করা, বাক্স্বাধীনতা, মানুষের অধিকার, সুশাসন, ন্যায়বিচার দিতে ব্যর্থ হওয়া একটি স্বৈরাচারী সরকারকে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ের আন্দোলন ও স্বৈরাচার, একদলীয় সরকারের সময়ের আন্দোলন কখনই এক রকম হয় না।
বিএনপি আন্দোলনে থেকে আরও শক্তিশালী হচ্ছে মন্তব্য করে রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপি ১৫ বছর ধরে আন্দোলনে আছে। এ আন্দোলনে দলটি অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হারিয়েছে। অসংখ্য নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে। অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন কর্মীর বিরুদ্ধেও অসংখ্য মামলা। বিএনপি প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে। তার প্রমাণ এত দমনপীড়ন সত্ত্বেও বিএনপির ডাকে মানুষের জমায়েত। পুলিশ প্রশাসন যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
জাতীয় সরকারের বিষয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, রাজনীতিবিদরা আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবেন, রাষ্ট্রনায়কেরা আগামী ১০০ বছরে দেশ কোথায় যাবে তা নিয়ে চিন্তা করেন। দেশনায়ক তারেক রহমান জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে ভাবছেন। জাতীয় সরকার কেন দরকার? এ দেশের নির্বাচন কাঠামোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দিনের ভোট নাকি রাতে হয়। নির্বাচন কমিশনই বলে, ‘আমাদের গোপন কক্ষে যে ভূত দাঁড়িয়ে থাকে, তাঁরাই হচ্ছে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি এবং মিত্র জোট যদি সরকার গঠন করতে পারে, তখন তাঁদের নিয়েই জাতীয় সরকার গঠিত হবে। নির্বাচনে মিত্র দলগুলো হারলেও সরকারে থাকবে।
বিএনপি সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র মেরামত করবে উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, গত ১০ বছরে সমাজ ও মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো ধ্বংস করা হয়েছে। সরকারের হস্তক্ষেপে সব রাষ্ট্রীয় ও সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় সমাজ, আইনশৃঙ্খলা ও সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন হলে হবে বলে বিএনপি বিশ্বাস করে না। এ জন্য পুরো রাষ্ট্রের মেরামত দরকার। এ জন্য সব দেশপ্রেমী শক্তির মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা দরকার।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, স্বৈরাচারী সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণ করতে চায়। এ জন্য তাঁরা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চায় না। এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদের চেয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ভারসাম্য রক্ষা করতে অনেক বেশি কার্যকর। এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় কোনো দল যদি নির্বাচনে বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, সে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠে। এ জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ধারণার সূত্রপাত। বিএনপি যদি দেশ পরিচালনায় আসে, তাহলে একসঙ্গে সবাই মিলে যেমন জনমতের সরকার গঠন হবে। তারা সমাজের জ্ঞানী-গুণী, পেশাজীবীদের নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি সংসদ তৈরি করবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের সঞ্চালনায় সভায় জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান, রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফজলুল হক, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল আলীম, বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন, মিডিয়া সেলের সদস্য আলী মাহমুদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।