- অক্টোবর ৫, ২০২২
- জাতীয়
- 341
নিউজ ডেস্কঃ জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা বিদ্যুৎ খাতসহ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সার্বিক ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে আসাদ গেটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি এটা (জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়) সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা। যে কথাটা আমাদের টুকু সাহেব বললেন যে, এখানে যে পরিকল্পনার মাধ্যমে এবং যে কাঠামোগত ব্যাপারটা থাকে অর্থাৎ টেকনিক্যাল সাইড যেটা থাকে, সেখানে টোটালি চুরি হয়েছে বলেই আজ এই বিপর্যয় ঘটেছে।
তিনি বলেন, এটা শুধু বিদ্যুতে নয়, সর্বক্ষেত্রে ঘটনাগুলো ঘটছে। যার ফলে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি, এর জন্য মূলত দায়ী সরকারের অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট গ্রহণ করা, বিভিন্ন ভুল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা, যার লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার যে এত চিৎকার-চেঁচামেচি করছে সবসময়— আমরা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, অতিরিক্ত উৎপাদনও হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সেগুলো নিয়ে আমরা সেমিনারে বলেছি কোথায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু গতকালের ব্যাপারটা ছিল অস্বাভাবিক। সারা দেশে প্রায় আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না, ব্ল্যাক আউটের মতো হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এর থেকে যেটা বোঝা যায়, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রজেক্ট করেছে, টাকা পয়সাও বহু বানিয়েছে। বানিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে এ ধরনের একটা বড় বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে, সব কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিকে এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন কীভাবে করবে— জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা একবারে প্রাইভেটাইজেশন জেনারেশনে যাব না। করলে সাধারণ মানুষের জন্য প্রাইজ করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা মিক্সড করব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে পলিসি ছিল ৩০ শতাংশ বেসরকারি এবং ৬০ শতাংশ সরকারে থাকবে— এভাবে আমরা বিদ্যুতের উন্নয়ন করব। এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ট্রান্সমিশন ও ডিসট্রিবিউশনটাও সমন্বয় করে করব। যাতে সমস্যা না হয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী মডেল অব ইকোনমি— এটা (জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়) তার প্রতিফলন। তারা করেছে কী? দুর্নীতির জন্য একচেটিয়া কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়েছে, যত তাড়াতাড়ি টাকা বানানো যায়। কিন্তু এগুলোর ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশনের যে সিনক্রোনাইজেশন তারা সেটা করেনি। কারণ সেদিকে তারা মনযোগ দেয়নি। এখান থেকে টাকা বেশি আছে বলেই তারা এটা করেছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হচ্ছে এসব পারমিশন কিন্তু আনসোলিসিটেড। এগুলোর টেন্ডার হয় নাই। তাদের (সরকার) নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। আইনও করা হয়েছে যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করা যাবে না। তাদের সব সুযোগ-সুবিধাসহ ফিক্সড চার্জসহ নিয়মিত পয়সা দিচ্ছে। জনগণকে আজ তার মূল্য দিচ্ছে।
‘এই সরকার এখন বোঝা’
মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। দেয়ার ইজ নট ইলেক্টেড পার্লামেন্ট। আপনি যে প্রশ্ন করবেন, কোথাও যে জবাব চাইবে সেই জবাবটাও চাইতে পারছেন না। যেহেতু এ সরকারের জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায় নেই, দায়িত্বশীলতার ব্যাপার নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এ ঘটনাগুলো ঘটছে এবং এই ঘটনাটা (জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়) তারই একটা প্রমাণ যে তাদের দায়িত্বশীলতার অভাব এবং তাদের জবাবদিহিতার অভাবের কারণে এ ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, সেই কারণে কিন্তু আমরা বারবার করে বলছি যে এই সরকার বারডেন হয়ে গেছে। দেশের উপরে এটা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। এই সরকারকে না সরালে এই জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই রাস্তা যে— দে মাস্ট রিজাইন এবং একই সঙ্গে একটা কেয়ারটেকারের অধীনে একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এছাড়া এর কোনো বিকল্প পথ নেই।
তথ্য উপরিকাঠামোর ঘোষণার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ভয়াবহ ব্যাপার। এখানে আমরা যেটা বলছি যে, কর্তৃত্ববাদী এই সরকার, তার যে বহিঃপ্রকাশ, তারা যে আরও নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে, দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে— সব তথ্য পাওয়া থেকে এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। এখন আর কোনো ফাঁকফোকর রইল না…। আমরা এই সার্কুলারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এটা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।