- অক্টোবর ২৩, ২০২২
- জাতীয়
- 251
নিউজ ডেস্কঃ দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে দিনের আলোয় সবাই কাজ সাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী। এ জন্য দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে বিরত থাকার শপথ নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
শিল্প খাতে জ্বালানি সংকটের প্রভাব প্রশমন নিয়ে রোববার এক আলোচনায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
জ্বালানি সাশ্রয়ে গত জুলাই থেকে ঘটা করে লোডশেডিংয়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি শীতের আগে মারাত্মক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৪ অক্টোবর পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকে রাতেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে, যে কারণে জনমনে ক্ষোভ স্পষ্ট।
বিদ্যুৎ কম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘যুদ্ধের সময় কিছুই ছিল না। কোনো খাওয়া ছিল না। তখনও বাঙালি পেরেছে। এখনও পারবে আশা করি।
‘সাশ্রয়ী হতে গিয়ে কষ্ট করতে হলে সবাইকে তা করতে হবে। সবাইকে তৈরি থাকতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার কম করব। দরকার হলে দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহারই করব না। আমরা শপথ নেব দিনের বেলায় কেউ বিদ্যুৎ ব্যবহার করব না।’
তিনি বলেন, ‘এমনও দিন ছিল যখন রাতে আমরা বাতি দিয়ে থেকেছি। দিনের আলোয় সব কাজ করেছি। এত আরাম-আয়েশে থাকতে হবে কেন? একটু কম করলেই হয়।’
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার না করার অনুরোধও করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা চাইলে এসি বন্ধ রাখতে পারি, বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে পারি। সারা দেশে যে পরিমাণ এসি চলে, তাতেই ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা আছে। আমরা এসি বন্ধ রাখব বা কম চালাব। এতে দুই-তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সেভ হবে। গ্যাস সাশ্রয় হবে।’
সরকার কী করতে যাচ্ছে, সেটি জানিয়ে তৌফিক বলেন, ‘আমরা কিছু ফাইনান্সিং চাইব, কিছু ভালো দেশের কাছে। এখন এটা কতদূর সমর্থন পাব জানি না, তবে খুব শিগগিরই আমরা চেষ্টা করব।’
কম দামে এলএনজির প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ
বিদ্যুৎ খাতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট মার্কেটে তরল গ্যাস বা এলএনজির দামে লাফ দেয়ার কারণে। এক বছর আগেও যে দর ছিল ৪ থেকে ৫ ডলার, সেটি মাঝে উঠে যায় ৪৭ ডলার। পরে অবশ্য সেখান থেকে নেমে এসেছে অনেকটাই। তারপরও এখন যে দর সেই দরে গ্যাস না আনার সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘কয়েকটা জায়গা থেকে খুব কম দামে এলএনজি কেনার জন্য অফার পেয়েছি। ১০ বা ১২ ডলারে দেবে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি। কীভাবে তারা দেবে তা জানি না।’
এবার শীতে কয়েকটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসবে জানিয়ে গ্যাস সংকটেরও সুরাহা হওয়ার আশা করেন তৌফিক-ই-এলাহি।
তিনি বলেন, ‘কোল বেজ কতগুলো পাওয়ার প্ল্যান্ট আসছে। সেখান থেকে কিছু গ্যাস দিতে পারব ইন্ডাস্ট্রিতে ৷ হাজার মেগাওয়াট সোলারের জন্য ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেব। এটা নিতে পারলে একটা গ্যাসের ওপর চাপ পড়বে।
‘ভোলা থেকে ৮০ এমএমসিএফ পরিমাণ গ্যাস আনব দুই উৎপাদন বাড়িয়ে গ্যাসের ওপর চাপ কমাব বছর খানেকের মধ্যে সোলার এনে।’
‘পরিস্থিতি দুই মাস চললে শেষ হয়ে যাব’
আলোচনায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই পরিস্থিতি আর দুই মাস চললে আমরা একবারে শেষ হয়ে যাব।’
অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়েক সেন বলেন, ‘খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা আমাদের মৌলিক নিরাপত্তা। এ দুটি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ইউরোপের মতো অবস্থা আমাদেরও হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্পট মার্কেট অরিয়েন্টেড করে আপাতত দুই মাস সমাধান দিতে পারব। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক বছরে শেষ হবে না। তাই সবাইকে সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘২০৪১ সালের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে ৩০০ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট লাগবে। যদি আমরা এই অবস্থায় থাকি তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচব বা প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ কীভাবে পূরণ করব? যদি আমাদের গ্যাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আমরা সবই করতে পারব।’
গাজীপুর ও সাভারের শিল্পগুলোকে সেখানেই রাখার পক্ষে তিনি। বলেন, ‘আমরা স্পেশাল ইকোনমিক জোন করছি। আর আপনারা (সরকার) বলছেন এগুলো সরিয়ে নিতে৷ যদি সাভার আর গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া না হয় তাহলে কোন এরিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল? আপনি তো (সরকার) এগুলো থেকে প্রফিটেবল (লাভবান)। তাহলে যেগুলো ইকোনমিক জোন হয়ে গেছে সেগুলো সেভাবে থাকতে দিন।’
টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘এক লক্ষ ডলারের গ্যাস দিলে আমরা ২৪ লক্ষ ডলার রপ্তানি এনে দেব, আর যদি দুই লক্ষ ডলারের গ্যাস দেন তাহলে ৪৮ লক্ষ ডলার রপ্তানি এনে দেব। তাই আমি অনুরোধ করছি আমাদের ২০০ এমএমবিটিইউ গ্যাস দিন, আমরা ৬০ লক্ষ ডলারের রপ্তানি এনে দেব।’
তিনি বলেন, ‘১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যয় বেড়ে যায় এক ডলার ৫৩ সেন্ট। তারপর আবার মেশিন চালু করতে লাগে ৩ ঘণ্টা। এতে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি এবং হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘গ্যাসের যেন একটাও কারখানা বন্ধ না হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ। ৫ শতাংশ গ্যাস দিলেও নাইট শিফট চালু করতে পারি। তাহলে কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করতে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘৩৮ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল। আর এখন ১১ শতাংশ নেগেটিভ।’
এফআইসিসিআই সহসভাপতি স্বপ্না ভৌমিক বলেন, ‘কটন প্রাইস বাড়ার জন্য পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। বিক্রয়মূল্য বাড়লে উৎপাদন কমে যায়। যেভাবে সব কিছুর দাম বাড়ছে এভাবে হলে এ খাতকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। অতএব সবাইকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই সংকটের সমাধান করতে হবে ‘
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ সহসভাপতি আক্তার হোসেন অপূর্ব বলেন, ‘ফার্নেস অয়েলের ৩৪ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করুন। এলএনজিতে ভ্যাট আছে কম। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আড়াই কোটি মানুষ জড়িত। তাই এ খাতকে বাঁচাতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’