• ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 193
সিলেটে কীভাবে ঘুরবেন

নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্ত মনোরম সবুজে মোড়ানো, কিন্তু অরণ্যঘেরা সৌন্দর্যের অন্যতম আধার সিলেট। কক্সবাজারের পরই ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মনে করা হয় জেলাটিকে।

একদিকে ছবির মতো সুন্দর চা-বাগান, অন্যদিকে সীমান্তের সুউচ্চ পাহাড় সিলেটকে করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানি।

জানুয়ারি থেকে মার্চই সিলেট ভ্রমণের সেরা সময়। মাসগুলোকে সামনে রেখে পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি সিলেট ঘোরার কার্যকর কিছু টিপস।

যাবেন কীভাবে

সিলেট যেতে রেল, সড়ক কিংবা বিমান ব্যবহার করা যায়। ঢাকা থেকে রেলপথে জেলাটিতে পৌঁছাতে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। সড়কপথে গেলে আবার সময় কিছুটা কমে ৫ ঘণ্টায় আসে।

ফ্লাইটে গেলে অবশ্য সময়ের হিসাব না করলেও চলে। কারণ মাত্র ৫৫ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবেন সিলেটে।

সাধারণত আরামের সঙ্গে যেতে চাইলে এসি বাস বা ট্রেন নেয়া হয়। একটু হিসাব করলে দেখা যায়, এসি বাস বা ট্রেনের এসি কেবিনের বিপরীতে বিমানের খরচ খুব একটা বেশি নয়। অল্প সময়ের মধ্যে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে চাইলে ফ্লাইটই সবচেয়ে উপযোগী।

ফ্লাইট বুকিংটা একটু সচেতনভাবে করা গেলে খরচ আরও নাগালের মধ্যে চলে আসে। শেষ মুহূর্তে বুকিং না করে দু-তিন সপ্তাহ হাতে রেখে বুকিং করলে পাওয়া যায় সেরা দামে। পর্যটনের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এখন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্যও আছে অনেক এয়ারলাইনস।

ফ্লাইটের সময়, দাম, ব্যাগেজ ধারণক্ষমতা ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে ফ্লাইট বুক করা দরকার, তবে বিভিন্ন দামের মধ্যে তুলনা করে দেখাটা অফলাইনে করা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। তাই অনলাইনে কাজটি করতে দেখে নিতে পারেন গোযায়ান।

সব ধরনের এয়ারলাইনসের দামসহ তুলনা করতে পারবেন এখানে। তা ছাড়া ফ্লাইটের খরচটা বেশি মনে হলে ব্যবহার করতে পারবেন শূন্য শতাংশ ইএমআই সুবিধা। অর্থাৎ এখনই ঘুরতে গিয়ে টাকা পরিশোধ করা যাবে কয়েক মাসের কিস্তিতে। তাই ঘোরাঘুরির পথে এখন নেই কোনো বাধা।

কোথায় ঘুরবেন

সিলেট বিভাগের একেক প্রান্তে একেক ধরনের সৌন্দর্য। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ছেয়ে আছে সবুজ চা-বাগানে। তা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের ২০ কিলোমিটারজুড়ে পুরোটাই চা-বাগান।

সিলেটের জিন্দাবাজার থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরেই বিখ্যাত লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চা বাগান।

শ্রীমঙ্গলে আছে ৪৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীবিশিষ্ট লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। মাধবকুণ্ড ঝরনা, মাধবপুর লেকের মতো জায়গাও শ্রীমঙ্গলেই।

ধবধবে সাদা পাথর ও স্বচ্ছ নীলাভ জলের জন্য বিখ্যাত সিলেটের জাফলং। একই রকমের দৃশ্য দেখা যায় ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে। মেঘালয়ের আকাশচুম্বী পাহাড়গুলোর দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যায় এসব জায়গা থেকে।

তেমনি আরেক আশ্চর্য বিছানাকান্দি। সীমান্তের ভারতের অংশ দেখা যায় ওই এলাকা থেকে।

বিছানাকান্দি থেকে নৌকায় কিছুদূর গেলে দেখে আসতে পারবেন ‘পাংথুমাই ঝরনা’। তা ছাড়া ‘বর্ডার হাট’ থেকে কেনা যায় নানা বিদেশি পণ্য।

বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল সিলেটের অংশ। অর্ধেক পানিতে ডুবে থাকা ম্যানগ্রোভ গাছের মাঝ দিয়ে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতিটাই অন্য রকম, তবে রাতারগুলের রহস্যময় সৌন্দর্য উপভোগ করার সেরা সময় বর্ষাকাল।

সিলেট থেকে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দূরে লালাখাল। মনোহারিণী জলের জন্য বিখ্যাত এই খালে নৌকায় চড়ে সুন্দর সময় কাটানো যায়।

শুধু স্বচ্ছ জল আর সুউচ্চ পাহাড়ই নয়, সিলেট শহরকে বলা হয় ‘মাজারের শহর’। হজরত শাহজালাল (রহ.) এবং হজরত শাহ পরানের (রহ.) দরগা সিলেটের অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি পর্যটন গন্তব্য।

থাকা-খাওয়া

বরাক থেকে শুরু করে সুরমা উপত্যকা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে সিলেটি রান্নার ইতিহাস। বিভিন্ন সভ্যতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে গড়ে উঠেছে সিলেটের রন্ধনশৈলী।

সাতকড়া দিয়ে রান্না মাংস এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে আছে ‘পানসী’ ও ‘পাঁচ ভাই’। মূলত স্থানীয় খাবারই এগুলোতে পরিবেশন করা হয়, তবে বর্তমানে বিদেশি বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালির রেস্তোরাঁও চালু হয়েছে শহরটিতে।

পর্যটনের জন্য জনপ্রিয় শহর হওয়ায় সিলেটে মোটামুটি সব ধরনের থাকার ব্যবস্থাই আছে। বেশি খরচ করলে পাওয়া যায় পাঁচতারা বিলাসবহুল রিসোর্ট।

এসব রিসোর্টে বিনোদনের এত ব্যবস্থা থাকে যে বাইরে ঘোরারও প্রয়োজন হয় না। গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট ও দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট খুবই জনপ্রিয় দুটি অবকাশ যাপন কেন্দ্র।

হোটেলের মাঝেই সুইমিং পুল, ইনডোর আউটডোর খেলাধুলা, শিশুদের খেলার জায়গা আছে।

একটু মাঝারি বাজেটের মধ্যে সিলেট ঘুরতে চাইলে হোটেল নুরজাহান গ্র্যান্ড অথবা হোটেল স্টার প্যাসিফিক দেখে নিতে পারেন। সুইমিং পুল না থাকলেও এখানে পাবেন আধুনিক সুবিধায় থাকার ব্যবস্থা, তবে অনেকেই চান একদম কম বাজেটের মধ্যে ঘুরতে।

অপেক্ষাকৃত স্বল্প বাজেটে ভালোভাবে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে হলি গেট ও রিচমন্ড হোটেলে। অর্থাৎ যেকোনো বাজেটেই এখন ঘুরে আসতে পারবেন সিলেট।

বাজেট অনুযায়ী হোটেল খোঁজার জন্যও দেখে নিতে পারেন গোযায়ান। হোটেলের জনপ্রিয়তা, দাম, সুযোগ-সুবিধা বাছাই করে খুঁজতে পারবেন আপনার জন্য সেরা হোটেল।

সামনের লম্বা ছুটিতেই পরিকল্পনা করে ফেলতে পারেন সিলেট ভ্রমণটি। ঘোরাঘুরির পথ এখন বাধাহীন।