- ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
- লিড নিউস
- 380
বিশেষ প্রতিবেদনঃ সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে দলীয় ফোরামে তীব্র লড়াই করেছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। আসাদ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাকির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। এরপর দলের মনোনয়ন পান কামরানই।
ঘটনাবহুল ওই নির্বাচনে কামরান হেরে যান। এতে দলীয় সর্তকবার্তাও পেয়েছিলেন সিলেটের নেতারা। তবে ওই বছরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে মাঠ ছাড়েননি আসাদ ও জাকির। তারা দু’জন তখন থেকেই মাঠে সক্রিয়। কামরানের মৃত্যুর পর থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন মহানগর আওয়ামী লীগের যগ্ম সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান, এটিএম হাসান জেবুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু।
দিন যতই এগুচ্ছে মাঠে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি লন্ডন থেকে এসে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ায় মাঠে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ওই নেতারা।
সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও।
প্রার্থীরা জানিয়েছেন, দলের কাছে তারা মনোনয়ন চাইবেন। এরপর দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার সঙ্গে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামবেন। তবে লন্ডন থেকে সিলেটে এসে মাঠে নামা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, দলীয় প্রধানের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এসে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সিলেটের একটি অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
তবে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ইতিমধ্যে সিলেটে দেয়া নাদেলের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেয়া হয়েছে। ফলে আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে সিলেটে মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে নিজের কাজ করেই যাচ্ছেন আনোয়ারুজ্জামান। প্রতিদিনই তিনি সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চষে বেড়াচ্ছেন সিলেট নগর। এই অবস্থায় বসে নেই অন্য প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন মাঠে কাজ করার পর নৌকার টিকিট তাদের চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে মনে একজোটও তারা। ‘আনোয়ার ঠেকাও’ এ মনোভাবও তাদের। এতে আড়ালে কাজ করছেন সিলেট নগরের সামাজিক নেতৃবৃন্দও।
আসাদ উদ্দিন আহমদ ছিলেন মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। গতবার আসাদ নৌকার টিকিটের জন্য দলীয় ফোরামে তীব্র লড়াই করেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নৌকা পান কামরান। এরপর থেকে আসাদ নীরব থাকেন। এবার নৌকার টিকিটের প্রত্যাশী হয়ে তিনি মাঠে রয়েছেন। তবে আসাদের ভাষ্য হচ্ছে; দলীয় সভানেত্রীর সিদ্বান্তই চূড়ান্ত। তিনি কখনো দলের সিদ্বান্তের বাইরে কাজ করেননি। অধ্যাপক জাকির হোসেন গতবার ছিলেন মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক। ওই পদ থেকেই তিনি দলের হাইকমান্ডের নজর কেড়েছিলেন। এবার তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক। কাউন্সিলের পর থেকে দল এবং সিটি নির্বাচন দু’টোকেই মাথায় রেখে তিনি কাজ করে চলেছেন। কামরানের মৃত্যুর পর তিনি তার কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছেন।সিটি নির্বাচনের আগে তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করতে তিনি এখন ব্যস্ত রয়েছেন। পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানেও বেড়েছে তার সরব উপস্থিতি।
অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, আমরা দলীয় ফোরামে অতীতেও মনোনয়ন চেয়েছি। পাইনি। এবার প্রস্তুতি নিয়েই এগুচ্ছি। তবে দল সুসংগঠিত হলে এবারের সিটি নির্বাচনে জয় পাওয়া কঠিন হবে না। আমরা এখন সেই কাজটিই করছি।
আজাদুর রহমান সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের ৪ বারের কাউন্সিলর। সর্বশেষ গত নির্বাচনে তিনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। কামরানের মৃত্যুর পর মেয়র পদে প্রার্থী হতে তিনি সক্রিয় হয়ে মাঠে নেমেছেন। তিনি প্রতিদিনই নগরের সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের সিনিয়র কাউন্সিলর হওয়ার কারণে আসন্ন বর্ষায় নগরের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ছড়া ও খাল উদ্ধার অভিযানে নেমেছেন। নগর কর্তৃপক্ষ ওই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন তাকে। ফলে এখন নগরবাসীর বৃহত্তর সেবায় আজাদ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
আনোয়ারুজ্জামান হঠাৎ করে এসে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দেয়ায় প্রথমেই ভার্চ্যুয়ালি আনোয়ারের সমর্থকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আজাদের সমর্থকরা। এখনো এই অবস্থা বিরাজমান। তবে আজাদ দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অনড়। ৪ বারের কাউন্সিলর হিসেবে তিনি এবার দলের হাইকমান্ডের সমর্থনের জন্য মাঠে নেমেছেন। এক্ষেত্রে তিনি পাচ্ছেন সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের আনুকূল্য। ইতিমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আজাদকে ভবিষ্যত নগরপিতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিলেটের মানুষের আবেগের জায়গা হচ্ছে প্রয়াত মেয়র কামরানের পুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু। পিতার মৃত্যুর পর থেকে শিপলু মেয়র নির্বাচন করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি পিতার মতো প্রতিদিন ৪-৫টি সামাজিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। কামরানের রেখে যাওয়া জায়গায় ইতিমধ্যে অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন তিনি। তার অনুপ্রেরণা হচ্ছে পিতা কামরানের ২০০৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই নির্বাচনে কারাগারে ছিলেন কামরান। আর বাইরে শিপলু দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। ওই নির্বাচনে জয়লাভ করেন কামরান। সিলেটের কামরান বলয়ের নেতাকর্মীদের আস্থার জায়গা শিপলুই। ফলে কামরানের আবেগ শিপলুর উপর বিরাজমান থাকার কারণে ভোটব্যাংক আছে তার। ডা. শিপলু জানান, পিতার মৃত্যুর পর আমি তার কাজগুলোই করে যাচ্ছি। মানুষের সুখে দুঃখে কাছে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বাকি সব দলীয় সিদ্ধান্ত।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল। সিনিয়র নেতা। দলের নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। বিগত সিটি নির্বাচনের পর থেকে তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থকরা নগরে পোস্টারিং করেছেন। এরপর এটিএম হাসান জেবুলের নামে পোস্টারিং করা হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এখন পদশূন্য নেতা। এরপরও সিলেটে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পরিচিত মুখ তিনি। এবার মিসবাহ সিরাজও দলের কাছে সিটি মনোনয়ন চাইবেন। মিসবাহ সিরাজ জানিয়েছেন, ‘নগরের ভোটারা তার পক্ষে রয়েছেন। এ কারণে তিনি দলীয় ফোরামে নৌকার টিকিট চাইবেন।’ সূত্রঃ দৈনিক মানবজমিন