• মার্চ ১৩, ২০২৩
  • শীর্ষ খবর
  • 172
ছবি এঁকে নদীর দখল-দূষণের প্রতিবাদ

নিউজ ডেস্ক: দখল-দূষণসহ নানাবিধ অত্যাচারে হবিগঞ্জের নদীগুলো বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। একটি জাতির সভ্যতা ও অস্তিত্বের অংশ নদী যদি না বাঁচে তাহলে আমাদের সভ্যতা-অস্তিত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস উপলক্ষে বক্তারা একথা বলেন। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “নদীর অধিকার”।

খোয়াই, সুতাংসহ হবিগঞ্জের সকল নদী দখল-দূষণ বন্ধের দাবিতে ‘ছবি এঁকে প্রতিবাদ’ করা হয়েছে। ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে ১৩ মার্চ হবিগঞ্জ টাউন হল প্রাঙ্গণে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা ) হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ সকাল সাড়ে ১০ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

বক্তব্য দেন বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তাহমিনা বেগম গিনি, চিত্রশিল্পী আশিস আচার্য। মূল বক্তব্য দেন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল।

তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে নদ-নদী, খাল, জলাশয়গুলো দূষিত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে! শুরু থেকেই কল কারখানাগুলো বেপরোয়াভাবে দূষণ চালিয়ে আসছে যা সংশ্লিষ্ট গ্রামসমূহের বাসিন্দাদের সাংবিধানিক অধিকারের উপর প্রত্যক্ষ আঘাত। কলকারখানার “উৎসে বর্জ্য পরিশোধন” ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং সুষ্ঠু শিল্পায়নের প্রয়োজনীয় ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বার বার আহ্বান জানিয়েছে আমরা। কিন্তু দূষণ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না, বরং দিনের পর দিন দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। কৃষিজমি খাল, ছড়া এবং নদীসহ সকল প্রকার জীবন ও জীবিকা মারাত্মক দূষণের শিকার হয়েছে। সুতাং নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। নদী ও হাওরে মাছ প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। অথচ অনিয়ন্ত্রিত শিল্পবর্জ্য দূষণ রোধে দায়িত্বশীলরা ভূমিকা নিচ্ছেন না।

তিনি আরও বলেন, উজানে ভারত সরকারের পানি সমীকরণ এবং দেশের অভ্যন্তরে দখল-দূষণ, খনন না হওয়ায় খোয়াই নদী ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্ষা মৌসুমে মানুষকে বন্যা আশঙ্কায় আতঙ্কে থাকতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত বালু মাটি উত্তোলনের ফলে নদীর তীর ঝুঁকিতে থাকে। অথচ এই নদীর উপর নির্ভর করে জেলার কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বাণিজ্যের একাংশ।

হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদীর চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, রীতিমত আঁতকে ওঠার মতো পুরাতন খোয়াই নদীর চিত্র। নদীর অধিকাংশ দখল-দূষণের শিকার হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির প্রধান আধার পুরাতন খোয়াই নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতাসহ কৃত্রিম বন্যার। প্রায় দেড় দশক ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ফলে পুরাতন খোয়াই নদীর একাংশের দখল উচ্ছেদ করা হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। যা পুনরায় দখলদারদের আওতায় চলে যাচ্ছে। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও ৫ কি.মি. দৈর্ঘ্যের নদীটি কবে দখলমুক্ত করা হবে তা কেউ জানে না!

সোনাই নদীর বুকে গড়ে উঠেছে বিশাল স্থাপনা। যা অবশ্যই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে সহজে দৃশ্যমান। নদী ভরাট কিংবা কোনো স্থাপনা নির্মাণ আইন ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। নদীর বুকে স্থাপনাকে প্রাধান্য না দিয়ে, সোনাই নদীকে বাঁচানোর প্রাধান্য দিতে হবে।

নদী জীবন্ত সত্তা। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে চিহ্নিত বা দৃশ্যমান সকল বেআইনি দখলদারদের স্থাপিত সকল অবকাঠামো দখলি অবস্থান অবিলম্বে ব্যতিক্রমহীনভাবে অপসারণ করে সকল নদী দখল, দূষণমুক্ত করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মসূচি চলাকালে উপস্থিত হন বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তাহমিনা বেগম গিনিসহ বিভিন্ন প্রিন্স ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।