- এপ্রিল ২০, ২০২৩
- লিড নিউস
- 327
নিউজ ডেস্কঃ যুবক আলে ইমরানের (৩২) সঙ্গে ৫ বছরের সংসার। সংসার জীবনের মাঝপথে মাহিদুল হাসান মাহিনের (২৪) পরকীয়ার ফাঁদে জড়িয়ে যান খুশনাহার (২১)। অতঃপর, যা হওয়ার তাই হলো! ‘স্বামীকে হত্যা করে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া!’ রূপালী পর্দায় দেখা এমন অভিনয় বাস্তবেই ঘটলো সিলেটে।
পরকীয়া প্রেমের বলি হলেন বেচারা আলে ইমরান। তবে স্বামীকে হত্যা করেও প্রেমিকের সঙ্গে ঘর করা হলো না খুশনাহারের। পুলিশের দূরদর্শী অভিযানে ধরা পড়লেন এই তরুণী।
জানা গেছে, পরকীয়া প্রেমে জড়ানোর আড়াই বছরের মাথায় পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে স্বামী আলে ইমরানকে হত্যার ছক তৈরী করেন খুশনাহার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কিলিং স্পট হিসেবে বেছে নেন সিলেটের জাফলংকে।
এমনই বাস্তব কাহিনী, যা সিনেমাকেও হার মানায়!
গত ১৬ এপ্রিল সকাল ৭টায় স্বামীকে নিয়ে জাফলং বল্লাঘাট পিকনিক স্পটের রিভারভিউ হোটেলে ওঠেন খুশনাহার। রাতে স্বামীকে মাথা ব্যথার ওষুধের পরিবর্তে খাওয়ান ঘুমের ট্যাবলেট। এরপর আরেক হোটেলে অবস্থান করা পরকীয়া প্রেমিক ও তার সঙ্গীদের নিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ইমরানকে হত্যা করে মরদেহ হোটেলের পেছনে ফেলে দেন।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও আসামিদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সিলেটের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, গত ১৭ এপ্রিল বিকেলে গোয়াইনঘাটের জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্টের পাশ থেকে পাথর চাপা অবস্থায় পর্যটক আলে ইমরানের মরদেহ অজ্ঞাতনামা হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে স্বামীর মরদেহ রেখে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান খুশনাহার।
নিহত আলে ইমরান কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে। খুশনাহারও একই গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে।
এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৮(৪)’২৩) রেকর্ড করে জড়িতদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাতে গোয়াইনঘাট থানা এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক অভিযানে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নাদিম আহমেদ নাঈমকে (১৯) নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের গাজীরটেক গ্রামের নিজবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার নাঈম ওই গ্রামের মো. জিন্নাতের ছেলে।
এছাড়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নিহত আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসপি জানান, নিহত আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারের সঙ্গে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি (পলাতক) মাহিদুল হাসান মাহিনের (২৪) আড়াই বছরের প্রেম। মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। ভিকটিম আলে ইমরানের সঙ্গে পাচঁ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সঙ্গে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় আলে ইমরানকে হত্যাচেষ্টা করে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আলে ইমরানকে বেড়ানোর কথা বলে গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে ভৈরব থেকে ট্রেনে সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন।
অন্যদিকে, একই দিনে খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিক মাহিন ও তার অফিসে কর্মরত গ্রেপ্তার নাদিম ও অপর পলাতক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন।
গত ১৬ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৭টা ৫০ মিনিটে জাফলং বল্লাঘাটস্থ রিভারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেলের ১০১নং কক্ষে ভিকটিম আলে ইমরান এবং তার স্ত্রী খুশনাহার অবস্থান করেন। অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাটে হোটেল শাহ আমিনে অবস্থান করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের আগেই কৌশলে তাদের অবস্থান করা হোটেল কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন খোশনাহার। পরবর্তীতে মাথা ব্যথার ওষুধের কথা বলে রাত ১০টার দিকে আলে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর আলে ইমরান ঘুমিয়ে পড়লে স্ত্রী খুশনাহার তার প্রেমিক মাহিনকে হোটেল রিভারভিউয়ে আসার জন্য বলেন। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে হত্যাকারী মাহিন তার অপর দুই সহযোগীকে নিয়ে হোটেল রিভারভিউয়ের ১০১নং কক্ষে প্রবেশ করেন এবং রাত অনুমান ২টার সময় খুশনাহার ও প্রেমিক মাহিন গলায় গামছা পেঁচিয়ে আলে ইমরানকে হত্যা করেন। এসময় আলে ইমরানের পা চেপে ধরেন গ্রেপ্তার আসামি নাদিম এবং পলাতক অপর সহযোগী রুমের বাইরে পাহারা দেন। এক পর্যায়ে আলে ইমরানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে হত্যাকারী মাহিন ও অপর দুই সহযোগী ভিকটিমর মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে হোটেলের পাশে পাথর চাপা দিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে হত্যাকারীরা হোটেল থেকে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বের হয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে সিলেট পালিয়ে যান।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।