• মে ২৭, ২০২৩
  • শীর্ষ খবর
  • 191
সংসদে আইন করে কাদিনায়ানিদের কাফির ঘোষণার দাবি

নিউজ ডেস্ক: কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে ‘উলামা পরিষদ বাংলাদেশ’র উদ্যোগে ‘বিভাগীয় খতমে নবুওয়াত মহাসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৭ মে) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মহানগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহাসমাবেশে বক্তারা মহান জাতীয় সংসদে আইন পাস করে করে কাদিনায়ানিদের কাফির ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

‘উলামা পরিষদ বাংলাদেশ’ নামের অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠনের ডাকে আয়োজিত এ মহাসমাবেশে অর্ধ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। দুপুরের আগে থেকেই বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি নিয়ে মিছিল সহকারে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা মহাসমাবেশস্থলের দিকে ছুটে আসতে শুরু করেন। জোহরের নামাজের পর রেজিস্ট্রারি মাঠে আর তিল ধারণের জায়গা থাকে না। এক পর্যায়ে মাঠ উপচে একদিকে তলতলা পয়েন্ট ও অপরদিকে কামরান চত্বর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। জনস্রোত থেকে কিছুক্ষণ পরপর স্লোগান উঠে- ‘নবীর পরে নবী নাই- সংসদে আইন চাই’।

বিকাল ৫টায় মুনাজাতের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শেষ হয়।

মহাসমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। এটা যেভাবে মুসলমানদের মূল বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। ঠিক তেমনি আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ (স.) সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর পর কোন নবি আসবেন না। এটা মুসলমানদের মূল বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বশেষ নবি, এটাই খতেম নবুয়ত। নবিজির পর আর কোনো নবি এ পৃথিবীতে আগমন করবেন না। এ ব্যাপারে কোনো মুসলমান যদি সামন্য পরিমাণ সন্দেহ করে সে মুসলমান থাকতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা- হযরত মুহাম্মদ (স.) শেষ নবি। আর স্বয়ং নবিজী তাঁর হাদিসে বলেছেন, আমিই শেষ নবি। আমার পর আর কোনো নবি আসবেন না।

বক্তারা আরও বলেন- কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারে মদদে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নামে অভিশপ্ত ব্যক্তি নবুয়তির দাবি করে। সেসময় থেকে তার অনুসারীরা নিজেদেরকে আহমদিয়া মুসলিম জামাত দাবি করে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দেশেও কাদিয়ানি ধর্ম অনুসারীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘদিন যাবত কাজ আন্দোলন চলছে। অনেক নবিপ্রেমি মুসলমান শাহাতাদ বরণ করেছেন। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয়- এখন পর্যন্ত মুসলমানের প্রাণের সেই দাবি বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়নি। ইদানিং কাদিয়ানী ধর্মের অনুসারীরা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় মসজিদের নামে উপাসনালয় স্থাপন করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈমাণ হরণের চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য- কাদিয়ানিরা মুসলমানদের ধর্মীয় শব্দাবলী ব্যবহারের অধিকার রাখে না। খৃষ্টান ও অন্যান্য ধর্মের মতো কাদিয়ানী ধর্মালম্বী হিসেবে বসবাস করুক আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই বর্তমানে সরকারে নিকট ৯৫ ভাগ মুসলমানের প্রাণের দাবি- আখেরি নবির পরে নবি নাই, সংসদে এমন আইন চাই।

মহাসমাবেশে উলামা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল খায়ের বিতঙ্গলী সরকার বরাবরে কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করেন।

মাওলানা শায়েখ জিয়া উদ্দিন, মাওলানা আলিমুদ্দিন দুর্লভপুরী ও মাওলানা শায়েখ মহসিন আহমদের যৌথ সভাপতিত্বে এবং মাওলানা আবুল হুসাইন চাতুলী, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা নিয়মত উল্লাহ খাসদবীরি, মুফতি রশিদ আহমদ ও মাওলানা আহমদ সগীর বিন আমকুনীর যৌথ পরিচালনায় মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাওলানা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বরুনা, মাওলানা আব্দুস সোবহান জাউয়া, মাওলানা আব্দুল বছির সুনামগঞ্জী, মাওলানা সামসুদ্দিন দুর্লভপুরী, প্রিন্সিপাল মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মাওলানা আহমদ আলী চিল্লা, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানিগঞ্জী, মাওলানা মুহিবুর রহমান মিটিপুরী, মাওলানা মাশুক আহমদ সালামী, মাওলানা আহমদ কবির বিন আমকুনী, মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, মাওলানা মুহিবুর রহমান মক্তিরচক, মাওলানা শায়েখ সাইফুল্লাহ, মাওলানা রেজাউল কবির আবরার, মাওলানা নজরুল ইসলাম তৌয়াক্কুলী, মুফতি মুজিবুর রহমান আঙ্গরা, মাওলানা ইউসুফ আহমদ খাদিমানি, মুফতি আবুল হাসান লামারগ্রামী, এডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী, ক্বারী আব্দুল হাফিজ শাহবাগ, মাওলানা এনুমুল হক বহরগ্রাম, মাওলানা হিলাল আহমদ হরিপুর, মাওলানা জিলাল আহমদ শ্রীরামপুরী, মাওলানা আহমদ বিলাল মৌলভীবাজার, প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান এল এল বি, মাওলানা তফজ্জুল হক আজিজ, মাওলানা গাজী রহমত উল্লাহ, মাওলানা জুনাইদ কিয়ামপুরী, মাওলানা মুহি উদ্দিন, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা জাকারিয়া মাহমুদ, মাওলানা তালিব উদ্দিন, মাওলানা ইমরান আলম, মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, মাওলানা নুর আহমদ কাসিমী, মাওলানা আব্দুর রহমান শাহ জাহান, মাওলানা সৈয়দ মাসরুর আহমদ, মাওলানা সাইদ আহমদ, মাওলানা আব্দুল্লাহ গাজীনগরী, মাওলানা দিলওয়ার হোসেন, মাওলানা এহিয়া খান, গোয়াইঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ, কানাইঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল্লাহ শাকের, রাজাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট মোহম্মদ আলী, মুফতি এবাদুর রহমান ও ক্বারি হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

এছাড়া মহাসমাবেশে বিশেষে অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আসন্ন সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলন মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান।

উল্লেখ্য, ‘উলামা পরিষদ বাংলাদেশ’র সভাপতি ছিলেন সিলেট সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বিন আল্লামা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ি)। শনিবারের মহাসমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত ১৭ তিনি শেষে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চলে যান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে। এ মহাসমাবেশে তাঁর সভাপতিত্ব করার কথা ছিলো। শনিবারের মহাসমাবেশে আল্লামা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ি)-এর জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসের দোয়া ও তাঁর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।