- মে ২৯, ২০২৩
- লিড নিউস
- 151
নিউজ ডেস্ক: বিগত ১২ বছর ধরে কাজ করা শ্রমিকরা চাকরি স্থায়ীকরণের আবেদন করায় নেতৃত্ব পর্যায়ের ১৩০ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে তেল ও গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি শেভরণ। সোমবার (২৯ মে) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন শেভরন বাংলাদেশ বøকস থার্টিন এন্ড ফরটিন লিমিটেড-এর চাকুরিচ্যুত শ্রমিকরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুসফেক উস সালেহীন।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় চাকরি করার পরও আমাদেরকে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর অনুযায়ী চাকরিতে স্থায়ী করা হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা পাইনি। এরকম শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আমরা আমাদের আইনগত অধিকার আদায়ের জন্য শ্রম আদালত, ঢাকার দ্বারস্থ হয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা আরও বলেন, ‘মামলা চলমান থাকাবস্থায় শ্রম আইনের সুরক্ষা বিধান লঙ্ঘন এবং আদালতে চলমান মামলার প্রতি বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে মামলার বাদীদেরকে টার্গেট করে ১৩০ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের ২০ মার্চ ৩২ জন, ২৪ এপ্রিল ১৫ জন, ২৫ এপ্রিল ২ জন এবং ৩০ এপ্রিল ৭৮ জনকে টার্মিনেট করা হয়।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী কোনো লিখিত আদেশ না দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রাতের বেলা মোবাইল ফোনে মেসেস পাঠিয়ে টার্মিনেশন করার কথা জানানো হয়। আমরা শেভরনের নিযুক্ত শ্রমিক হলেও টার্মিনেট করা হয় কথিত ঠিকাদারের মাধ্যমে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও আইনবহির্ভূত।
তারা বলেন, ‘আমরা কোম্পানির অধীন সিলেট, মৌলভীবাজার, বিবিয়ানা, সিলেট গ্যাসক্ষেত্রে কর্মরত। আমাদের চাকরির বয়স নি¤েœ ১২ বৎসর এবং কারও কারও সর্বোচ্চ ২৪ বৎসর। আমরা যখন চাকরিতে যোগদান করি তাখন সরাসরি শেভরন বাংলাদেশ বøকস থার্টিন এন্ড ফরটিন লিমিটেড, শেভরন বাংলাদেশ বøক টুয়েলভ লিমিটেড কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে এর পূর্বসূরি অক্সিডেন্টাল কিংবা ইউনোকল বাংলাদেশের অধীন ছিল। শেভরন আসে ২০০৫ সালে।’
‘তখনকার বিদ্যমান শ্রম আইনের বিধানমতে তিন থেকে ছয় মাস চাকরি করার কারণে আমরা সবাই আইনের প্রয়োগবলে আমাদের বিদ্যমান চাকরিতে শেভরন কিংবা পূর্বসূরির অধীন আপনা-আপনি চাকরিতে স্থায়ী হই। কিন্তু শেভরন কর্তৃপক্ষ (কিংবা উহার পূর্বসূরি) তখন আমাদেরকে অস্থায়ী নিয়োগপত্র প্রদান করেন; পরিচয়পত্র দেন, কাজের উপকরণ দেন; বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিলে শেভরনের লোগো সম্বলিত সনদপত্র দেন। কিন্তু আইনের বিধান অমান্য করে শেভরন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগপত্র, সার্ভিস বহি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এবং কোম্পানির মুনাফার অংশ দেননি।’
শেভরনের চাকরিচ্যুত কর্মচারিরা এসব অব্যাহত বঞ্চনা এবং ঠকানোর নেপথ্যে কিছু বিদেশি এবং এদেশীয় কর্মকর্তা-সুপারভাইজার জড়িত বলে দাবি করেন। তারা বলেন, ‘এ কর্মকাÐের মাধ্যমে একদিকে তাদের আত্মীয়-স্বজনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার বানিয়াছেন, নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার-হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে তারা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।’
লিখিত বক্তব্যে তারা আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চাকরিতে বঞ্চিত ও নির্যাতিত। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রতিকারের জন্য প্রায় ৪০০ শ্রমিক ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকার বিজ্ঞ প্রথম শ্রম আদালতে পৃথক-পৃথকভাবে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর অধীন মামলা করেন। মামলা এখনও বিচারাধীন।’
তারা বলছেন, শ্রম আইনের ২২৮(১) বিধান অনুযায়ী আদালতে কোনো কার্যক্রম (মামলা) চলাকালে বিরোধে যুক্ত কোনো শ্রমিকের চাকরির বিদ্যমান (মামলা দায়ের করিবার পূর্বেকার) চাকরির শর্তাবলীতে কোনোরূপ পরিবর্তন আনার বিধান না থাকলেও শেভরন কর্তৃপক্ষ এই ১৩০ জন মামলার বাদী শ্রমিককে স¤প্রতি চাকরিচ্যুত করেছেন; যা আদালত অবমাননার সামিল।
চাকরির নিয়ন্ত্রক ও তদারককারীগণ হলেন শেভরন’র স্থায়ী কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ বলেও জানান তারা। বলেন, ‘আমরা যখন শেভরনের অধীন চাকরিতে যোগদান করি তখন কথিত কোন ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করার আইনি বিধান ছিল না। ২০১৫ সালে তা যুক্ত হয়েছে। তবে, স্থায়ী কোনো পদে ঠিকাদারের মাধ্যমে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করার বিধান নেই। আর শ্রম আইনের ৩ক ধারার বিধান হলো সরকারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ব্যতিত কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শ্রমিক সরবরাহ করতে পারবে না।’
কিন্তু শেভরন ২০০৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে কাজ করা ব্যক্তিকে ২০১৮ সালের লাইসেন্স পাওয়া ঠিকাদারের অধীন শ্রমিক বানানোর বেআইনি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ তাদের।
তারা জানান, সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড নামের কথিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার আগেই ১ জানুয়ারী ২০১৫ কথিত আউটসোর্সিং কনট্রাক্ট সাক্ষর করে। আর প্রপার্টি কেয়ার বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের (পিসিএস) সঙ্গে কথিত আউটসোর্সিং কনট্রাক্ট (চুক্তি) স্বাক্ষরের তারিখ হলো ১ এপ্রিল ২০১৫।
শ্রমিকরা বলেন, ‘এ ধরনের চুক্তি অকার্যকর বটে। কারণ তখন কথিত ঠিকাদারের কোনো রেজিস্ট্রেশন ছিল না। তাঁদের রেজিস্ট্রেশনের হয় ২৭ জানুয়ারি ২০২১ এবং ৫ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে।’
শ্রমিকরা দাবি করেন, ঠিকাদার সংস্থা সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেট কিংবা পিসিএস আমাদের কোনো শ্রমিককে কখনো কোনো নিয়োগপত্র দেয়নি। কিংবা প্রপার্টি কেয়ার বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড যে কথিত নিয়োগপত্র দেয় তা এক নম্বর বিবাদীর পাতানো খেলার অংশ।’
শ্রমিকরা শেভরনের স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগপত্র প্রদান এবং অন্যান্য অধিকার বাস্তবায়নের দাবি জানান। এ জন্য তারা সরকারের শ্রম অধিদপ্তর তথা রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
একইসাথে শেভরন কর্তৃপক্ষের শ্রম আইন লঙ্ঘন এবং শ্রমিকবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাÐের বিষয়ে প্রতিকার পেতে সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিআকর্ষণ করেন।