- জুন ১৫, ২০২৩
- মৌলভীবাজার
- 335
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ কিছু দিন পর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ার ওপর দিয়ে বহমান রেললাইনের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে রেল যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের আওতাধীন শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং শ্রীমঙ্গল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লাউয়াছড়ার রেল লাইনের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩টি গাছ চিহ্নিত করেছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২০ মে ভোরে এই লাউয়াছড়ায় ঝড়ের কারণে কয়েকটি মাঝারি আকারের গাছের সঙ্গে একটি বিশালাকৃতি চাপরাশি গাছ রেল লাইনের ওপর ভেঙে পড়ে। এর ফলে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ আরো দুটি বগি উল্টে গিয়ে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১৬ ঘণ্টা পর পুররায় রেল যোগাযোগ সচল হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কিছু কিছু স্থানে রয়েছে টিলার অংশ। এরই নিচ দিয়ে বয়ে গেছে সিলেট-আখাউড়া রেললাইন। টিলার ওপর প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা বড় বড় গাছগুলোর ডালপালার কিছুটা অংশ গিয়ে পড়েছে রেললাইনের ওপর। ঝড়বৃষ্টি হলেই গাছ বা গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের আওতাধীন শ্রীমঙ্গল রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, লাউয়াছড়ার রেল লাইনের পাশের কিছু গাছ পুরানো হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাটাগরিতে চলে গেছে। আমরা দুই বিভাগ এগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে এমন ৪৩ গাছ চিহ্নিত করছি। সেগুলোর তালিকা করে ডিএফও এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। ওনারা সরেজমিন দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন।
ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোর মধ্যে চিকরাশি, চাপালিশ, বনাকসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ রয়েছে, ফলে তদন্ত শেষে পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে জানানোর পর এগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ বলেন, আমরা এগুলো কাটবো না। এটা কাটার দায়িত্ব বন বিভাগের। সম্প্রতি আমাদের দুই দপ্তর একত্রিত হয়ে লাউয়াছড়ায় রেলপথের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। সেগুলো যাচাইবাছাই থেকে বন বিভাগই ওই চিহ্নিত গাছগুলো কাটবে। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশও রক্ষা করা দরকার। এরপরও যতটুকু সেফ করে ট্রেনগুলো চালানো যায় সেটাই আমরা চেষ্টা করছি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, ১২৫০ হেক্টর আয়তনের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এখানে বহু বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। যারা শুধু গাছের ওপর জীবনচক্র নির্বাহ করে এমন মহামূল্যবান প্রাণীও আমাদের এখানে রয়েছে। তাই শুধু গাছ কাটলেই হবে না, প্রতিটি গাছ আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ কি না, গাছের এই প্রজাতিটি মহাবিপন্ন কি না, মহাবিপন্ন হয়ে থাকলে ওই গাছগুলোর টিস্যু কালচার সংগ্রহ করে রাখা-এ বিষয়গুলোও আমরা লক্ষ্য রাখছি। তবে রেলের ঝুঁকির বিষয়টিকেও উপেক্ষা করা হচ্ছে না।