• জুলাই ১৮, ২০২৩
  • মৌলভীবাজার
  • 296
লাউয়াছড়ায় গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়লো উল্লুকের বিরল দৃশ্য

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ উল্লুককে স্থানীয়রা ডাকেন ‘বনমানুষ’। এই বিশেষ প্রাণীটির সংখ্যা বাংলাদেশে খুবই কম। শুধু বাংলাদেশেই কেন? সারা পৃথিবীতেই অল্প সংখ্যক রয়েছে। ওই প্রাণীটির বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, ওরা পরিবারভুক্ত এবং পুরোপুরিভাবে বৃক্ষচারী অর্থাৎ উল্লুকের তিন থেকে চারটি একটি পরিবারিক দলভুক্ত হয়ে থাকে।

অনেকটা মানুষের মতোই উল্লুকগুলো ছোট ছোট পরিবার তৈরি করে থাকে। স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে একেকটি পরিবার আকারে বাস করে। এভাবেই ওরা প্রাকৃতিক বনের গাছে গাছে ঘুরে ঘুরে চিৎকার-চেঁচামেচি করে জীবনচক্র অবিবাহিত করে। কিন্তু গোপনভাবে স্থাপিত ক্যামেরায় ধরা পড়লো, অন্য তথ্য। উল্লুক শুধু গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায় না, বিশেষ প্রয়োজনে মাটিতেও নামে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং মাংসাশী স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ বলেন, গত ৪/৫ বছর ধরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বনে ক্যামেরা ট্র‌্যাকিং করেছি। তাতে উল্লুক মাটিতে নামার তিনটা বা চারটা ঘটনা আমরা পেয়েছি। ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাটি দিয়ে বড় পুরুষ আকৃতির একটি উল্লুক হেঁটে যাচ্ছে, এটি খুবই বিরল ঘটনা। কারণ আমরা জানি, স্তন্যপায়ী ওই প্রাণীটি পুরোপুরিভাবে বৃক্ষচারী অর্থাৎ গাছে গাছেই জীবন কাটে তাদের।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিভিন্ন বনের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে একাধিকবার ধরা পড়েছে মাটিতেও নামে উল্লুক। আমাদের এই মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে এমন ইন্টারেস্টিং বিষয়গুলো আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এর ফলেই এমন ব্যতিক্রমী ঘটনাগুলো আমরা জানতে পেরেছি। তবে এরা খুব বেশি যে মাটিতে নেমে ঘোরাফেরা তাও না।

ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের এমন ক্যামেরা পাঁচ হাজার পাঁচশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনে ক্যামেরা ট্রেপ নাইট হয়েছে। তার মানে প্রত্যেকটা ক্যামেরা যদি এক রাত করে সচল থাকে তাহলে এক ক্যামেরা ট্রেপ নাইট। গত ৪/৫ বছরের ন্যূনতম পাঁচ হাজার পাঁচশ ক্যামেরা ট্রেপ নাইট হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

গোপন ক্যামেরার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রাজকান্দি সংরক্ষিত বন, রেমাকালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যসহ আরেকটি স্থানে ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে। তবে পাঁচ হাজার পাঁচশ ক্যামেরা ট্রেপ নাইটে তিন বা চারবার এমন দৃশ্য পাওয়া খুব বেশি কিছু না। তারপরও আমরা নিশ্চিত হয়েছে, প্রয়োজনে গিবন (উল্লুক) কিন্তু মাটিতে চলাফেরা করে থাকে। ক্যানোপি কানেকশন থাকুক বা না থাকুক।

যে বিশালাকৃতির গাছ আর কার নিচে উল্লুকটির মাটিতে নামার প্রসঙ্গে এ মাংসাশী স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী গবেষক বলেন, এখানে যে উল্লুকটি হেঁটে যাচ্ছে এটা রাজকান্দি সংরক্ষিত বন থেকে ক্যামেরা ট্রেপে ধারণ করা। এখানে আমরা বসেছিলাম মূলত ভাল্লুকের জন্য। পাশে যে একটা বড় গাছ দেখা যাচ্ছে এই গাছে ভাল্লুকের নখের প্রচুর দাগ রয়েছে। এখানে বনছাগলও এসেছিল। সবমিলিয়ে এই জায়গাটা বেশ ভালোই। অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের ক্যামেরায় একটি প্রাণী চলে এসেছে। ওই গাছটি ছিল ‘অ্যাসিড’ গাছ। স্থানীয়ভাবে একে ‘যাওয়া’ গাছ বলা হয়। ওই গাছে জামের মতো ফল ধরে। মানুষ ফলটি খেতে পারে না, অনেক টক। তবে ভাল্লুকের ফলটি অনেক প্রিয়। এটা চাপালিশ সাইজের অনেক বড় গাছ।

উল্লুকের ইংরেজি নাম Hoolock Gibbon এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hylobates hoolock। প্রাপ্তবয়স্ক একেকটি উল্লুক প্রায় ৪৫ থেকে ৬৩ সেন্টিমিটার লম্বা এবং প্রায় ৫ থেকে ৭ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। পুরুষ উল্লুক কালো রঙের হয় আর স্ত্রী উল্লুক ধূসর রঙের হয়ে থাকে। উল্লুকরা লেজবিহীন প্রাণী।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ প্রাণীটিকে পৃথিবীব্যাপী ‘মহাবিপন্ন’ হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে।