• সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
  • শীর্ষ খবর
  • 205
সিলেটের গ্রামেগঞ্জেও ছড়িয়েছে এডিস মশা

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে গত সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে ৪৮১ জনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশের ঢাকায় যাতায়াতের তথ্য নেই। আবার ঢাকায় যাতায়াত তো দূরের কথা, সিলেট শহরেও আসা-যাওয়া ছিল না এমন রোগীও রয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা লার্ভার নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট লোকজন বলছেন, এর আগের বছর সিলেটে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ১২৬ জনের। এবার মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই সাড়ে তিন গুণের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগামী বছর ডেঙ্গু নিয়ে বড় ঝুঁকিতে মুখে পড়বেন সিলেটের মানুষ। এ জন্য বছরজুড়ে সমন্বিতভাবে মশকনিধন ও জনসচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে শীত মৌসুমে মশকনিধন কার্যক্রম পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।

সিলেটের মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় লার্ভা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটবিষয়ক প্রয়োগ কুশলী। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আগামী বছর শুধু সিলেটে নয়, সারা দেশেই ডেঙ্গু মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। এর থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সমন্বিতভাবে মশকনিধন কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। এডিস মশা শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, প্রত্যন্ত এলাকাতেও ছড়িয়েছে। তাই একযোগে মশকনিধন কার্যক্রম চালালে ভালো ফল আশা করা যায়।

সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৪৮১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সের রোগী ছিলেন। সোমবার পর্যন্ত ১৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম কালীনগর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন (২৭) বলেন, তিনি নিজ এলাকায় অবস্থান করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথমে দুদিন জ্বর ছিল। এ সময় মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করত। জ্বর না নামায় তিনি পরীক্ষা করাতে গিয়ে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি ঢাকায় যাননি।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা ইউসুফ আলী (৪০) বলেন, তিনি ১০-১২ দিন আগে ঢাকায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার দুদিন পর থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর গত শনিবার সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা ও জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।

ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, ডেঙ্গু শনাক্তের কিট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা রয়েছে। নির্দেশনা রয়েছে ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকলে পরীক্ষা করে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার। এ ছাড়া আগেরবার স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত রোগী পাওয়া না গেলেও এবার সেটি পাওয়া যাচ্ছে। এটি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডেই কমবেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। জুলাই ও আগস্ট মাসে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মোট তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান ও বাসার মালিককে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় এডিসের লার্ভা মিলেছে।

প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় মশার লার্ভা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে জরিমানার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মশকনিধন কার্যক্রম অবশ্যই সিটি করপোরেশনের ওপর বর্তায়। কিন্তু অনেক সময় ঘরে ঘরে গিয়ে মশকনিধন করা সম্ভব হয় না। এলাকায় কার্যক্রম চালালেও নাগরিকের ঘরে ঢুকে ওষুধ ছিটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী সিলেটে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে মশকনিধন কার্যক্রম এবং জনসচেতনতার বিকল্প দেখছেন না। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সিলেটে ডেঙ্গুতে প্রাণহানি হয়নি। কিন্তু প্রতিরোধ গড়ে না তুললে মোকাবিলা করা কষ্টকর হবে।