• নভেম্বর ২২, ২০২৩
  • লিড নিউস
  • 181

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকা কালিগাছতলা। এলাকাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ৫-১৫ ফিট আয়তনের একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করে দিয়েছে জেলা পৌরসভা। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে সেটি নির্মাণ করা হয়েছে, তা কাজে আসছে না। এসটিএসের ভেতরে উচ্ছিষ্ট না ফেলে বাইরে ফেলা হচ্ছে। ফলে দুর্গন্ধের কারণে এলাকাটি দিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন দৃশ্য শুধু কালিগাছতলায় নয়। শহরের বেশ কয়েকটি এসটিএস ঘুরে দেখা যায়, সেগুলোর ভেতর পরিষ্কার, অথচ বাহিরে আবর্জনার স্তূপ।

পৌরসভার তথ্য মতে, ২০২১ সালে পৌর এলাকার ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসটিএস ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয়। তবে সেগুলোতে আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে অনীহা সাধারণ মানুষের। ডাস্টবিনগুলো ব্যবহার না করে অনেকেই নিজেদের উচ্ছিষ্ট ফেলছেন ড্রেন, পুকুর-জলাশয় কিংবা রাস্তার পাশে। এ কারণে আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জ পৌরসভা।

কালিগাছতলা এলাকার বাসিন্দা মনোরঞ্জন পাল বলেন, ‘অনেকেই নিজেদের বাসার ভেতর থেকে ময়লা পাশের ড্রেন বা পুকুরে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ এই এসটিএসে এলেও ভেতরে ময়লা না ফেলে বাহিরে ফেলে চলে যাচ্ছেন। এ কারণে এগুলো করেও কোনো লাভ হয়নি।’

নোয়াহাটি এলাকার বাসিন্দা সুনির্মল দাস বলেন, ‘প্রধান সড়ক পর্যন্ত এসটিএসের ময়লা চলে আসে। তখন স্কুলগামী শিশুসহ সবাইকেই এসব নোংরা মাড়িয়েই চলাচল করতে হয়। এতে শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া পৌরসভার কর্মীরা বাসা-বাড়িসহ হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য এনে এখানে ফেলছেন।’

বৃন্দাবন সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রূপক পাটোয়ারি জানান, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কলেজে যাওয়া-আসা করতে হয়। কিন্তু এসটিএসের কাছে এলে নাক বন্ধ করে চলতে হয়। বৃষ্টি হলে এই এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ময়লা মিশে রাস্তায় উঠে আসে।

শহরের সাধুর মাজার এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, ‘সব কিছুর ভুক্তভোগী কিন্তু আমাদেরই হতে হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের চারপাশের পরিবেশের কথা চিন্তা না করি, তাহলে পৌরসভা বা সরকার কতটা করবে?’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় ময়লার স্তূপ। এর ফলে চলাফেরা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে পৌরসভাকেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে।’

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘পৌরসভার ৭০ শতাংশ পরিবার পৌরসভার গাড়িতে ময়লা দেন। বাকিরা যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলেন। এসব কারণে শহরে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি শহরের ১৪টি স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য বড় বড় ঘর বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এসব ঘরের ভেতরে কেউ ময়লা ফেলতে চায় না। সবাই বাইরে ফেলে চলে যায়। সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন আবর্জনা এসটিএসের ভেতরে ফেলেন। কিন্তু কেউ শোনতে রাজি না। আমরা এত টাকা খরচ করে এসটিএস বানিয়ে দিলাম, কিন্তু মানুষ যদি ব্যবহার না করে, তাহলে আমরা কী করব?’

মেয়র বলেন, ‘কিছুদিন পর পরই এগুলো পরিষ্কার করিয়ে দিই। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার নোংরা করে ফেলে। আমার কাছে অভিযোগ আছে, পৌরসভার লোকজনও এসটিএসের ভেতরে ময়লা ফেলেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহরের অনেক মানুষ বাসাবাড়ির ভেতর থেকে ড্রেনে, পুকুর-জলাশয়ে ময়লার ব্যাগ ফেলে দিচ্ছে। অথচ আমরা সব সময় বলি তারা যেন পৌরসভার গাড়িতে এই আবর্জনাগুলো দেন।’ সূত্র: খবরের কাগজ