- মে ১৫, ২০২৪
- মৌলভীবাজার
- 96
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ ১৫৩ রোহিঙ্গাকে অসৎ উদ্দেশ্যে জন্মনিবন্ধনের কারণ দেখিয়ে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বুধবার (১৫ মে) রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ঘটনাটি আমি রাজনগর উপজেলায় জয়েন করে শুনেছি।
আমি আসার আগেই এ ঘটনাটি ঘটেছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি যেহেতু বর্তমানে তদন্তাধীন, তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। তবে বিষয়টি এখনো উচ্চ পর্যায়ে তদন্তাধীন রয়েছে। বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলে ইউপি চেয়ারম্যানকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হতে পারে।
ইউনিয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব এ কে এম আনিছুজ্জামানের সই করা প্রজ্ঞাপনে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্তের এ আদেশ দেওয়া হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আসিয়া বিবি (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা নারী পাসপোর্ট করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। তার আইডি কার্ড না থাকায় জন্মনিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করতে যান তিনি। আসিয়া আক্তার যে নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলেন সেটি রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন থেকে নিবন্ধিত, যা গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, আটক ওই নারী কক্সবাজারের টেকনাফ থানার আলী যোহার ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির মেয়ে বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি যাচাই করার জন্য ওই সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠালে ইউএনও ফতেহপুর ইউনিয়নের সচিব পাপড়ি দত্তকে কার্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে ওই ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধনের আইডি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। ওই সময় কয়েকশ’ রোহিঙ্গা নিবন্ধন হয়েছে বলে ধারণা করেন সংশ্লিষ্টরা। যাচাই করে ওই সময় ইউএনও দেখতে পান ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫৩টি ভুয়া নিবন্ধন হয়েছে। তারা সবাই রোহিঙ্গা হিসেবে সন্দেহ করেন। এ ব্যাপারে ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস রাজনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৫৩ রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কয়েক লাখ টাকার লেনদেনে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এতে ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস ও ডিজিটাল সেন্টারের কর্মকর্তা নয়ন গোপ্তাসহ কতিপয় আত্মগোপনে থাকা ব্যক্তিরা জড়িত আছেন। জন্মনিবন্ধনের সার্ভারের কার্যক্রম ওটিপিভিত্তিক। ওটিপি আসার পর ইউপি চেয়ারম্যান যাচাই করে নিবন্ধনের সুপারিশ করতে হয়। তাই এখানে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া করা সম্ভব নয়। কঠোর নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও আইডি কীভাবে হ্যাকড হলো এ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। পরে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে বিষয়টির তদন্ত করা হয়।
প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ১ নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (নিবন্ধক) নকুল চন্দ্র দাস অসৎ উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন করায় স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। যেহেতু ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে; সেহেতু ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনায় আইন অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর পর স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ২৪ এপ্রিল ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাসকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত) নকুল চন্দ্র দাস বলেন, সার্ভার হ্যাকড হয়ে ভুয়া নিবন্ধন করা হয়েছে। এসব নিবন্ধনে আমাদের সই নেই।